সাত ধাপের ইউপি নির্বাচন
ভোটের সংঘাতে মৃত্যু ১০০ ছাড়াল
সহিংসতায় গতকাল ভোটের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় দুজন এবং আগের দিন কুমিল্লার দেবীদ্বারে এক চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রাণ হারিয়েছেন।
শেষ ধাপের ভোটেও রক্ত ঝরল। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় গতকাল সোমবার ভোট গ্রহণকালে গোলাগুলি ও সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন কিশোর। তার নাম মো. তাসিব। সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। ভোটকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল ওই কিশোর। তখন তাকে প্রতিপক্ষ ভেবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত অপরজন বহিরাগত। তাঁর নাম আবদুস শুক্কুর (৪০)। তিনি চট্টগ্রাম নগরের শুলকবহরের বাসিন্দা। বাজালিয়া ইউপিতে নৌকার প্রার্থী তাপস দত্তের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে বহিরাগত এই যুবক প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যান।
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ভানী ইউপিতে ভোট গ্রহণের আগের দিন গত রোববার স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর আত্মীয়ের লাথিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. নুরুজ্জামান ভূঁইয়া মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই ইউপির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এই তিনজনসহ সাত ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সংঘাত ও সহিংসতায় ১০১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।
এসব প্রাণহানির ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায় নেই বলে দাবি করেছেন এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। সপ্তম বা শেষ ধাপের ইউপি ভোট গ্রহণ শেষে গতকাল বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে ইসির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসে এমন দাবি করেন এই অতিরিক্ত সচিব।
ইউপির সাত দফা ভোটে নির্বাচনী সহিংসতায় কতজন মারা গেছেন জানতে চাইলে ‘সেই তথ্য এই মুহূর্তে নেই’ বলে জানান অশোক কুমার দেবনাথ। তবে গতকালের শেষ ধাপের ভোটে নির্বাচনী সহিংসতায় দুজন মারা গেছেন জানিয়ে ইসির এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে ভোটকেন্দ্রে গোলমালের জন্য ভোটকেন্দ্রের বাইরেই মারা গেছে বলে শুনেছি। পুরো প্রতিবেদনটি এখনো আমরা পাইনি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সপ্তম ধাপের ভোটে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত ২৭টি ইউপির বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেছেন ১০টিতে, আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ ৫টিতে, স্বতন্ত্র হিসেবে জিতেছেন বিএনপির দুজন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন ১০ জন। এর আগে ষষ্ঠ ধাপ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ২ হাজার ১৩৩টিতে এবং বিএনপি নেতারা ৩৩৮টিতে জয়লাভ করেছেন।
সাত ধাপে ১০১ জনের মৃত্যু
মারামারি, সংঘাত–সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো সাড়ে চার মাস ধরে চলা ইউপি নির্বাচন। সাত ধাপের ভোটে গতকাল পর্যন্ত ১০১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। তাঁদের বেশির ভাগের মৃত্যু হয়েছে সংঘর্ষে, ধারালো অস্ত্রের কোপে, গোলাগুলি ও পিটুনিতে।
ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দেখেছে নরসিংদীর মানুষ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে সংঘাতে এই জেলায় ১১ জন নিহত হয়েছে। তাঁদের প্রায় সবাই গুলিতে নিহত হয়েছেন। নির্বাচনকেন্দ্রিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু বগুড়া জেলায়। পঞ্চম ধাপে এ জেলায় সাতজন নিহত হয়েছেন।
নরসিংদীর দুই উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে সহিংসতায় মোট ১১ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের সবাই মারা গেছেন গুলিবিদ্ধ হয়ে। সে সময় স্থানীয় লোকজন, রাজনীতিবিদ ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করা, চরাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা খুব একটা ভালো না থাকায় পুলিশের কম নজরদারি এবং অবৈধ অস্ত্র সহজলভ্য হওয়া এমন সহিংসতার অন্যতম কারণ।
নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু বগুড়ায়। এ জেলায় চতুর্থ ও পঞ্চম দফায় অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় সাতজন নিহত হন। এর মধ্যে ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র গাবতলী উপজেলার একটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে পোলিং এজেন্টসহ চারজন, অন্য আরেকটি কেন্দ্রে ছুরিকাঘাতে একজন নিহত হন। এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় গাবতলী ও কাহালু উপজেলায় ছুরিকাঘাতে আরও দুজন নিহত হন।
মারামারি ও সহিংসতাকে সঙ্গে করে প্রথম ধাপের ভোটের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে। সেবার ৫ জন নিহতের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় ধাপে সবচেয়ে বেশি ৩০ জন নিহত হন, তৃতীয় ধাপে ২৬, চতুর্থ ধাপে ১০, পঞ্চম ধাপে ২৩, ষষ্ঠ ধাপে ২ ও সপ্তম ধাপে ৫ জনসহ মোট ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সপ্তম ধাপে গতকাল ১৩৮টি ইউপিতে ভোট গ্রহণের কথা থাকলেও ভোট হয়েছে ১৩৬টিতে। গত ৩১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ধাপে ২১৯ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গত ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে ৭০৭টি ইউপিতে ভোট হয়। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে ৮৪০টি ইউপিতে, ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৭, ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩, ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর দুই পর্বে প্রথম ধাপের ৩৬৯টিসহ মোট ৪ হাজার ১১১টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
সাতকানিয়া ও কুমিল্লায় নিহত ৩
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ভোট চলাকালে গতকাল দিনভর বিভিন্ন ইউনিয়নে গোলাগুলি, কোপাকুপি ও মারামারিতে দুজন নিহত ও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কাঞ্চনা ইউনিয়নে এক পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কিছু বহিরাগতও রয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন ইউনিয়নে ভোটে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাতকানিয়ার ১৬ ইউনিয়নে গতকাল ভোট গ্রহণ হয়। চারটি ইউপিতে চেয়ারম্যান বিনা প্রতদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এর বাইরে ১১টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। অপর একটি ইউনিয়ন খাগরিয়া থেকে নৌকার প্রার্থীর প্রতিপক্ষ সাবেক এলডিপি নেতা মো. জসিম উদ্দিন।
নির্বাচনের দিন সকালে শুরু থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যেসব ইউনিয়ন গোলযোগপূর্ণ ছিল তার মধ্যে খাগরিয়া, নলুয়া, বাজালিয়া, চরতী, কাঞ্চনা, ধর্মপুর, সোনাকানিয়া অন্যতম। মূলত চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দল ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে কেন্দ্র দখল ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। দখলে নেতৃত্ব দেন বহিরাগতরা। নৌকার পক্ষে বহিরাগত বেশি ছিল। তবে অন্যদেরও বহিরাগত ছিল।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহিরাগতসহ যারাই এসব ঘটনা ও অস্ত্রবাজি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গতকাল ভোট গ্রহণের সময় সাতকানিয়ার বাজালিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বোর্ড অফিস কেন্দ্রে বেলা ১১টায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী তাপস দত্ত ও বিদ্রোহী প্রার্থী শহীদুল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গুলির পাশাপাশি ধারালো অস্ত্র (কিরিচ) নিয়েও দৌড়ঝাঁপ করে দুই পক্ষ। এ সময় আবদুস শুক্কুর (৪০) নামের এক যুবক নিহত হন। তিনি তাপস দত্তের লোক বলে তাপস স্বীকার করেছেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নলুয়া মরফলা গ্রামের বোর্ড অফিস কেন্দ্রের পাশে দাঁড়ানো ছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মো. তাসিব। এ সময় কেন্দ্রে মারামারি শুরু হয়। সবাই পালিয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে একজন এসে তাসিবকে গলায় কোপ দিয়ে চলে যায়। পরে গুরুতর আহত তাসিবকে সাতকানিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত তাসিবের বাবা জসিম উদ্দিন রিকশা চালান। কেন্দ্রের পাশেই তাঁদের বাড়ি। জসিমের মামাতো ভাই মিজানুর রহমান ওই ওয়ার্ডের সদস্যপদে নির্বাচন করছিলেন। তবে জসিমের অভিযোগ, এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোক এসে তাঁর ছেলেকে কুপিয়ে চলে যায়।
এদিকে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ভানী ইউপিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. নুরুজ্জামান ভূঁইয়া গত রোববার রাত ১০টার দিকে মারা গেছেন। এ কারণে এই ইউপিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যসহ সব পদে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম।
মো. নুরুজ্জামান ভূঁইয়ার বাড়ি দেবীদ্বার উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে। তিনি ভানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান ছিলেন। নুরুজ্জামান ভূঁইয়ার ভাই কামরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, গতকাল বিকেলে নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী জালাল উদ্দিনের ভাগনে পাশের চান্দিনা উপজেলার বাসিন্দা ছাত্রদল নেতা আবদুল কাইয়ুম। তাঁকে দেখে প্রতিবাদ করেন নুরুজ্জামান। তখন কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নুরুজ্জামানের বুকে লাথি মারেন কাইয়ুম। এতে তিনি মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান। পরে তাঁকে কুমিল্লার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জালাল উদ্দিন বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে নুরুজ্জামান হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কেউ তাঁকে লাথি মারেননি।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৩৬৮
সাত ধাপে ইউপি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৩৬৮ জন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় এসব ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ভোটের প্রয়োজন হয়নি। এর মধ্যে বেশ কিছু ইউনিয়নে চেয়ারম্যানসহ কোনো পদেই ভোট নিতে হয়নি। সব মিলিয়ে এবার ইউপি নির্বাচনে বিনা ভোটে জনপ্রতিনিধি হওয়ার ক্ষেত্রে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এবার সাত ধাপে দেশে ৪ হাজার ১১৩টি ইউপিতে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৮টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি সাধারণ মানুষ।
এভাবে বিপুলসংখ্যক জনপ্রতিনিধি বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এবার বিনা ভোট নিয়ে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে চট্টগ্রামের রাউজান এবং কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা রাউজান। এ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ভোটের তারিখ হলেও ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগই পাননি। এসব ইউপিতে শুধু চেয়ারম্যান নয়, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যপদের সব কটিতেই প্রার্থী ছিলেন একজন করে। বিনা ভোটে নির্বাচিত এসব চেয়ারম্যান ও সদস্যরা স্থানীয় সাংসদের অনুসারী হিসেবেই পরিচিত।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লার লাকসামের মানুষও এবার একই ধরনের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। এ উপজেলার পাঁচটি ইউপিতে কোনো পদেই ভোটের প্রয়োজন হয়নি।
বিতর্কিত ব্যক্তি ও বক্তব্যের ছড়াছড়ি
সাত ধাপের প্রতিটি ধাপের নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিতর্কিত ব্যক্তিদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে হত্যা, ধর্ষণ, অর্থ ও চাল আত্মসাৎসহ চাঁদাবাজি মামলার অনেক আসামিকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দিয়েছিল দলটি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার কার্ড নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আছে এমনকি একসময় বিএনপির রাজনীতি করেছেন—এমন সব লোকজনও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পঞ্চম ধাপে আট জেলায় এমন ১৫ জন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীর খবর পাওয়া গিয়েছিল। এর আগে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে ১৯ জনকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছিল, যাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অর্থ ও চাল আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ ছিল।
বিতর্কিত ব্যক্তিদের পাশাপাশি নির্বাচনকে ঘিরে বিতর্কিত কথাবার্তা বলেও সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের কেউ ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, কেউবা একে–৪৭ রাইফেলের ভয় দেখিয়েছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা নানা উসকানিমূলক বক্তব্য দিলেও কারও বিরুদ্ধে সাংগঠনিক বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন প্রতিপক্ষের প্রার্থী ও সমর্থকদের একে-৪৭-এর ভয় দেখিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রয়োজনে একে-৪৭ ব্যবহার করা হবে। গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হুমাইপুর ইউপির নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জয়লাভ করেন। দ্বিতীয় ধাপে মাদারীপুরের কালকিনির লক্ষ্মীপুর ইউপি নির্বাচনে এক পথসভায় উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন মোল্লা হুঁশিয়ারি বলেছিলেন, ‘...দুইডা অস্ত্র লইয়া আমি থাকমু, কারও বাপ-পুত থাকলে আমার সামনে জানি আসে। দয়া কইরা নৌকার বিরুদ্ধে কেউ যাইয়েন না। নৌকার বিরুদ্ধে গেলে কারও বাঁচন নাই।’ অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেওয়ার পরও পুলিশ নীরব ছিল।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা]