ভোটকক্ষের ‘ডাকাত’ দূর করার কৌশল নিয়ে ভাবছেন সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনের সময় ভোটকক্ষে ‘ডাকাত’ থাকার বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। এখন কীভাবে এই ‘ডাকাত’ দূর করা যায়, সেই কৌশল নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন নিয়ে আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সিইসি। সেখানে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা ও মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারসহ ইসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেছিলেন, ওখানে (গোপন ভোটকক্ষে) একজন ডাকাত থাকে। আমি জানতাম না যে একজন ডাকাত থাকে। দা, ছুরি, খন্তা, একে–৪৭ নিয়ে থাকে। এখন যেহেতু জেনেছি, আমরা কীভাবে এটা ওভারকাম করব, সেই কৌশল নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করেছি।’
এরপরও যদি ‘ডাকাত’ থাকে এবং সেটার ছবি তুলে আনতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে ওই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হবে বলে আশ্বাস দেন সিইসি। পাশাপাশি অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার কথাও বলেছেন তিনি।
এ সময় সাংবাদিকদের কাছে সিইসি জানতে চান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গোপন ভোটকক্ষে কয়টা ডাকাত পেয়েছেন। তার জবাবে একজন সাংবাদিক জানান, তিনটি ছবি প্রকাশ পয়েছে। সেসব ছবি দেওয়ার জন্য বলেন সিইসি।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান জানান, কুমিল্লার নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা দেখে কমিশনে বসে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
‘৫ মিনিটে ফল পাল্টে দেওয়া সম্ভব নয়’
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, কুমিল্লায় যখন ফল ঘোষণা হচ্ছিল, তখন রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি ওয়াশরুমে যাব। পাঁচ মিনিট ভোট গণনা বন্ধ থাকবে। এই কথার পর প্রার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তখন গন্ডগোল হয়।
জবাবে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ‘ন্যাচারাল কলের’ কথা বলে ওয়াশরুমে গেছেন। এটাকে খুব বড় করে দেখার কিছু আছে বলে মনে করি না। কেউ যেতেই পারেন। আর সেই পাঁচ মিনিটে সব ভোট পাল্টে যাবে, তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। টয়লেটের কথা বলে তিনি ফল পাল্টে ফেলেছেন, এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ওই সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা কেন ফল ঘোষণা বন্ধ রাখেন এবং কার সঙ্গে কথা বলেন সেটার ব্যাখ্যা দিয়ে কমিশনার আলমগীর বলেন, ১০১টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণার পর যে সমস্যা হলো, ওই সময় ফলাফল ঘোষণার পরিবেশ ছিল না। ওই সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন যে এখানে এমন কিছু ঘটে কি না, যাতে ফলাফল শিট ও ল্যাপটপের কিছু হয়ে যায়। তিনি এই ভয়ে ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ডিসি, এসপি ও সিইসিকে ফোন করেছেন নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য।
গত বুধবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ফল ঘোষণার শেষ পর্যায়ে এসে হট্টগোল হয়। প্রথমে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ভোটের ফল ঘোষণা হচ্ছিল। ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণার পর কিছুক্ষণ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এর পর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হকের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিশৃঙ্খলার কারণে ফল ঘোষণা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ৩৪৩ ভোটে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া মনিরুল হক অভিযোগ করেছেন, তাঁকে পরিকল্পনা করে হারানো হয়েছে।