ভোট জালিয়াতির ঘোষণা আ.লীগ সাংসদের!
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের ভোটকেন্দ্র দখল করে বেলা ১১টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনন্দ মিছিল করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন যশোর-১ (শার্শা) আসনের সাংসদ শেখ আফিল উদ্দীন। গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনী এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন। আজ বৃহস্পতিবার আফিল উদ্দিনের ওই বক্তব্যের সিডি সাংবাদিকদের হাতে পৌঁছেছে।
এর আগে আফিলের বক্তব্যের সিডিসহ ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়। গতকাল বুধবার যশোর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল ইসলামের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শাহীন-উল-কবীর এ আবেদন করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও যশোরের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান ‘প্রথম আলো’কে বলেন, সাংসদ আফিলের ওই বক্তব্যের সিডিসহ আবেদনপত্রটি নির্বাচন তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টির তদন্তকাজ শুরু করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে আফিল উদ্দীনের বক্তব্য নিতে তাঁর মুঠোফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
যশোর-২ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনিরুল ইসলাম ও কলস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রফিকুল ইসলাম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মনিরুল ইসলাম যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। রফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকলেও তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
মনিরুল ইসলামের পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে গত ৩০ ডিসেম্বর ঝিকরগাছা উপজেলার পারবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মতবিনিময় সভায় সাংসদ আফিল উদ্দীন প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যে তিনি কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিয়ে নৌকা প্রতীককে জয়ী করার আহ্বান জানান।
আফিল উদ্দীন সেদিন যা বলেছিলেন
‘মাঠ যেন ফাঁকা না হয়ে যায়। ১০০ ছেলে থাকবে প্রতিটি কেন্দ্রে। ওরা বুথে যাবে, আবার এসে লাইনের পেছনে দাঁড়াবে। ওরা বাড়ি যাবে না। ১০০ ছেলে সব সময় লাইনে থাকবে। এইভাবে বুথে যাবে, আবার আসবে। লোক ও সাংবাদিকরা এসে দেখবে যে ভোটের মাঠ ভরা।’
ভোটারদের উদ্দেশে আফিল আরও বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দরকার নেই। ভোটাররা ভোট দেখতে আসবেন। কোনো সমস্যা নেই।’
এজেন্ট ও কর্মীদের উদ্দেশে সাংসদ বলেন, ‘আর আপনারা যাঁরা আমার নৌকা মার্কার এজেন্ট বা কর্মী, তারা সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রে লাইন দিয়ে পর্যায়ক্রমে ভোট দেবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ১০০ জন করে কর্মী সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবেন। একজন ভোট কেন্দ্রে যাবেন, পিছনে ৯৯ জন অপেক্ষা করবেন। এভাবে সারা দিন চলতে থাকবে। এভাবে সারা দিনই ওই ১০০ জনই ভোট শেষ করবেন। সাংবাদিকেরা এসে ছবি তুলে নিয়ে যাবেন। সবাই দেখবে ভোট কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ভোটার আছে।’
কর্মীদের সাহস দিতে গিয়ে আফিল উদ্দীন বলেন, ‘আপনারা যদি কোনো প্রশাসনিক সমস্যায় পড়েন আমাকে বলবেন। আমি জবাব দেব। তার জন্যে যা যা করণীয় ভোটের মাঠে তা কিন্তু করা লাগবে। কী করা লাগবে আমি তো মাইকে বলতে পারব না। একা একা জিজ্ঞাসা করবেন, বলে দেব। সুন্দর করে ভোট করবেন। ভোট যেন নৌকা পায়, সেজন্যে সুন্দর করে ভোট করবেন। মাঠ যেন ফাঁকা হয়ে না যায়।’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-১ (শার্শা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্তমান সাংসদ শেখ আফিল উদ্দীন। তিনি ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।