ভোগান্তি কমবে, বাঁচবে সময় ও খরচ
বিনিয়োগের দিক থেকে দক্ষিণাঞ্চলের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের সময় ও দূরত্ব। পদ্মা সেতু হলে ঢাকা থেকে দক্ষিণের জেলাগুলোয় যেতে বাসের ক্ষেত্রে গড়ে ২ ঘণ্টা ও ট্রাকের ক্ষেত্রে ১০ ঘণ্টা সময় সাশ্রয় করবে। আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও পদ্মা সেতু বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এশিয়ান হাইওয়ে এএইচ-১-এর সঙ্গে যুক্ত হবে পদ্মা সেতু।
ফলে ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ তৈরি হবে। কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় ট্রানজিটের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা আছে। এর ফলে আঞ্চলিক বাণিজ্য আরও বাড়তে পারে।
২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কয়েকটি সমীক্ষা হয়। সমীক্ষাগুলো করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং সেতু বিভাগের জন্য সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। এডিবির সমীক্ষায় দেখা যায়, উদ্বোধনের বছর সেতু দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করবে প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন। তার মধ্যে বাস চলবে ৮ হাজার ২৩৮টি, ট্রাক ১০ হাজার ২৪৪টি, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার চলবে ৫ হাজারের বেশি।
পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়বে। ২০২৫ সালে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে দিনে যানবাহন চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে ২৭ হাজার ৮০০টি। ২০৩০ সালে হবে ৩৬ হাজার ৭৮৫, ২০৪০ সালে দিনে যানবাহন চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে ৫১ হাজার ৮০৭টি। ২০৫০ সালে প্রায় ৬৭ হাজার যানবাহন প্রতিদিন চলবে পদ্মা সেতু দিয়ে। এর সুফল পাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ।
পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল যত বাড়বে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ততই বাড়বে। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে লাভ কী হবে, তা নিয়ে ২০০৯ সালে আলাদা সমীক্ষা করে এডিবি ও জাইকা। এতে দেখা যায়, পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগের অর্থনৈতিক প্রভাব বা ইকোনমিক রেট অব রিটার্ন (ইআইআরআর) দাঁড়াবে বছরে ১৮ থেকে ২২ শতাংশ।
র্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে দিনে প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ১৯৯৮ সালে চালুর পর এই সেতু দিয়ে দিনে দুই হাজারের কিছু বেশি যানবাহন চলাচল করত। দুই যুগে ১২ শতাংশের বেশি যানবাহন চলাচল বেড়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেতু বিভাগ বলেছে, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে। পদ্মা সেতুর মূল্যায়ন নিয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এডিবি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জিডিপি একই প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়। এই সেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
অর্থনৈতিক সুফলের পাশাপাশি আরও কিছু সামাজিক বিষয়ও আছে। ঢাকা থেকে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ—এসব জেলার দূরত্ব ৫০ থেকে ১৩০ কিলোমিটারের মধ্যে। এই পথ পাড়ি দিয়ে এত দিন ঢাকায় আসতে চার থেকে আট ঘণ্টা সময় লেগেছে।
এখন ঢাকা থেকে দ্রুতগতির মহাসড়ক ধরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগবে বলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর জানিয়েছে। ফলে পদ্মার ওপারের পাঁচ জেলার মানুষ চাইলে ঢাকায় না থেকেও চাকরি কিংবা ব্যবসা করতে পারবে। এতে ঢাকার ওপর চাপ কমবে। সাশ্রয় হবে সময় ও অর্থের।