ভূমধ্যসাগরে ঠান্ডায় মারা যাওয়া ৭ বাংলাদেশির পরিচয় জানাল দূতাবাস
লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার পথে ঠান্ডায় প্রাণ হারানো সাত বাংলাদেশির পরিচয় জানা গেছে। এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে ইতালির রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস।
দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, মারা যাওয়া সাতজন হলেন—
১. ইমরান হোসেন, গ্রাম: পশ্চিম পিয়ারপুর, উপজেলা: মাদারীপুর সদর, জেলা: মাদারীপুর।
২. জয় তালুকদার ওরফে রতন, গ্রাম: পিয়ারপুর, উপজেলা: মাদারীপুর সদর, জেলা: মাদারীপুর।
৩. সাফায়েত, গ্রাম: ঘটকচর, উপজেলা: মাদারীপুর সদর, জেলা: মাদারীপুর।
৪. জহিরুল, গ্রাম: মোস্তফাপুর, উপজেলা: মাদারীপুর সদর, জেলা: মাদারীপুর।
৫. বাপ্পী, উপজেলা: মাদারীপুর সদর, জেলা: মাদারীপুর।
৬. সাজ্জাদ, গ্রাম: মামুদপুর, উপজেলা: জামালগঞ্জ, জেলা: সুনামগঞ্জ।
৭. সাইফুল, উপজেলা: ভৈরব, জেলা: কিশোরগঞ্জ।
দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৫ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালির ল্যাম্পেদুসা দ্বীপে যাওয়ার পথে অতিরিক্ত ঠান্ডায় ৭ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ইতালি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কোনো ধরনের শনাক্তকারী নথিও ছিল না। ফলে শনাক্তকরণে জটিলতা দেখা দেয়।
সাত বাংলাদেশির পরিচয় নিরূপণের জন্য উদ্ধার করা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মারা যাওয়া সাতজনের পরিচয় পাওয়া যায়।
মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ সরকারি খরচে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এখন স্বজনদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে বলে জানায় দূতাবাস।
মারা যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারকে দ্রুত নিকটস্থ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় বা ই–মেইলের মাধ্যমে রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। দূতাবাসের ই–মেইল: [email protected]।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, অবৈধভাবে নৌকাযোগে লিবিয়া থেকে ইতালির ল্যাম্পেদুসা দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন একদল অভিবাসনপ্রত্যাশী। যাত্রাপথে ঠান্ডায় প্রাণ হারান সাতজন।
ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, ওই নৌকায় যাত্রী ছিলেন ২৮৭ জন, তাঁদের মধ্যে ২৭৩ জনই বাংলাদেশি।
ল্যাম্পেদুসা দ্বীপটি ইতালির মূল ভূখণ্ড থেকে যতটা না কাছে, তার চেয়ে বেশি কাছে আফ্রিকার দেশগুলোর। এতে আফ্রিকা হয়ে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশী পাঠানোর ক্ষেত্রে রুটটি ব্যবহার করেন মানব পাচারকারীরা।
ইউরোপে শীত বাড়ছে, এতে বৈরী হয়ে উঠছে আবহাওয়া। এ ছাড়া অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যাতে ইউরোপে ঢুকতে না পারেন, সেই চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে এই অঞ্চলের দেশগুলো। এরপরও চলতি বছরের শুরু থেকে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছেন।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছর অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টা আরও বাড়তে পারে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে তিউনিসিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে ১৭ বাংলাদেশি প্রাণ হারান।
কয়েক বছর ধরে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২০ সালে ইতালিতে ৩৪ হাজার অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশী পাড়ি জমিয়েছিলেন। ২০২১ সালে পাড়ি জমান ৬৪ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী।
জানুয়ারিতে ভূমধ্যসাগরের তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে। এ ছাড়া সমুদ্রও উত্তাল থাকে। এরপরও চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৫০ জনের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী ইতালিতে গেছেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) গত বছর জানায়, ২০১৪ সাল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ বা মারা গেছেন ২২ হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী। এর মধ্যে গত বছর প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় দুই হাজার।