‘ভালোবেসে’ আইজিপির ছবিসহ পোস্ট শেয়ার করছেন পুলিশ সদস্যরা
পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের ছবিসহ পোস্ট শেয়ার করছেন পুলিশ সদস্যরা। ‘আওয়ার আইকন আওয়ার প্রাইড’ স্লোগান লেখা এই পোস্টে তাঁকে মাদক ও জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার রূপকার বলেছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, আইজিপি দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ এক সন্তান। পোস্টের সঙ্গে একেকজন পুলিশ সদস্য একেক রকম প্রশংসাসূচক বাক্যও যুক্ত করেছেন।
১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও রাজস্ব দপ্তর আলাদা বিবৃতিতে আইজিপি ও র্যাবের মহাপরিচালকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাত সদস্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সোমবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইজিপির পক্ষে পুলিশ সদস্যরা পোস্ট দিতে শুরু করেন। এ নিয়ে যোগাযোগ করা হয় পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভালোবাসার জায়গা থেকে পোস্ট দেওয়া। উন্নয়নের মহাসড়কে জোরেশোরে ছোটার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আইজিপি স্যারকে বেছে নিয়েছেন। বিগত কয়েক বছরে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না হলে এই বিনিয়োগ আসত না।’ তিনি আরও বলেন, মার্কিনরা জঙ্গিবাদ প্রতিরোধকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেন। পুলিশ মহাপরিদর্শকের নেতৃত্বে এই মাদক ও জঙ্গিবাদবিরোধী যে অভিযান চলছে, তা সব জায়গায় প্রশংসিত হচ্ছে।
যে পোস্টটি পুলিশ সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন, তাতে লেখা হয়েছে, ‘ওয়ান অব আওয়ার গ্রেটেস্ট সন অব সয়েল’ (মাতৃভূমির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে অন্যতম সন্তান)। তার নিচে লেখা, ‘দ্য কমান্ডার বিহাইন্ড সাসটেইনেবল সিকিউরিটি’ (টেকসই নিরাপত্তার অধিনায়ক)। এ ছাড়া একটি সচিত্র পোস্টে পুলিশ মহাপরিদর্শককে র্যাব মহাপরিচালকের পোশাকে দেখা যায়। কোনো একটি অভিযানের সময় তোলা ওই ছবির নিচে লেখা, ‘দ্য ম্যান বিহাইন্ড দ্য প্রোগ্রেস অব ড্রাগ, মিলিট্যান্সি অ্যান্ড এক্সট্রিমিজম ফ্রি বিলাভড বাংলাদেশ’ (মাদক, জঙ্গি ও উগ্রবাদমুক্ত প্রিয় বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রগতির কারিগর)। এর সঙ্গে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরের টুকরা অংশের কোলাজ জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
পোস্ট শেয়ারের বাইরেও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পরিচালিত একটি সংবাদ পোর্টালে নাহিদ উকিল জুয়েল নামের এক ব্যক্তির লেখা প্রকাশ করা হয়েছে। ওই লেখার শিরোনাম, ‘আইজিপিকে নিয়ে চক্রান্ত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শামিল’।
মার্কিন সিদ্ধান্ত লবিস্টদের প্ররোচনায়: বিপিএসএ
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএসএ) সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশবিরোধী একটি চক্র বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশকে বিব্রত করতে চায়। তাদের লক্ষ্য দুই দেশের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করা। আন্তর্জাতিক লবিস্ট গ্রুপের সহায়তায় ভুল, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সরবরাহ করে, তারাই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থাকে গোপন করেছে। এই চক্র যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করেছে।
বাংলাদেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার সুরক্ষা, আন্তর্জাতিক প্রটোকল ও কনভেনশন প্রতিপালন এবং স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ ভূমিকা রেখে চলেছে বলে উল্লেখ করেছে বিপিএসএ। তারা এসব বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, এতে বাংলাদেশ পুলিশের চলমান আন্তদেশীয় সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএসএ) গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে আরও জানায়, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের গণমানুষের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সন্ত্রাসবাদ দমন, মানবাধিকার সুরক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব সময় বাংলাদেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সরকারি পর্যায় ছাড়াও প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপর্যায়েও এই সুসম্পর্ক আছে। বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের কর্মতৎপরতার কারণে বাংলাদেশে চমৎকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশ বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয় বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, আন্তদেশীয় অপরাধ দমন, সাইবার অপরাধসহ নানা ধরনের অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ নানাভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
বিপিএসএ বলেছে, এমন ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ এক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থ দপ্তর ও পররাষ্ট্র দপ্তর পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সাতজন কর্মকর্তার ওপর যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এমন ‘আকস্মিক’ একতরফা সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য মর্মাহত ও বিব্রত।