ভালো দিকগুলো দেখার পক্ষে
খুব স্বাভাবিকভাবেই ইন্টারনেট আমার কাছে অপরিহার্য বিষয়। একইভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো দারুণ প্রয়োজনীয়। কথা হচ্ছে, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো আমরা কখন ও কী কাজে ব্যবহার করছি। কাজের সময়ে ব্যবহার করলে এগুলোর বিভিন্ন নেতিবাচক দিকই সামনে আসবে। কেবল সময় কাটানোর জন্য ব্যবহার করলে একসময় এগুলো অভিশাপ হিসেবেই জীবনে প্রভাব ফেলবে। তারপরও সব বিচারে আমি ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইতিবাচক দিকগুলো দেখার পক্ষে। তরুণ–তরুণীরা যেন এগুলো ব্যবহারে পরিমিতিবোধের পরিচয় দেয়, তা নিশ্চিত করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। কেননা এর সঙ্গে সময়, স্বাস্থ্য, সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়–আশয় সরাসরি যুক্ত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলতে ফেসবুকই আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এর ব্যবহারকারীদের সিংহভাগই তরুণ। ফলে তাদের না বললেও চলে যে ফেসবুক কতটা শক্তিশালী মাধ্যম। এর জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী। কারণ, ফেসবুক ব্যবহার করে আমরা আনন্দ পাই। অনলাইনে গুজব যেমন দ্রুত ছড়ায়, তেমনই ভালো খবর ছড়াতেও সময় লাগে না। ফেসবুক বা অনলাইন মাধ্যমগুলোকে ভালো খবর ছড়ানোর মতো কাজেই বেশি বেশি ব্যবহার করতে হবে। তরুণ–তরুণীরা অবশ্য এসব প্রতিদিনই করছে। ফেসবুকে রোজ অনেক ভালো কাজের খবর পাই, ছবি ও ভিডিও দেখি। এর পাশাপাশি এফ কমার্স অর্থাৎ ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসাতেও তাদের আগ্রহ বাড়ছে। অনেকেই ভালো কাজ করছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও ফেসবুকের চাহিদা শীর্ষে। ফলে এই খাতেও তারা ভালো কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। ডেভেলপাররা যেমন ফেসবুকের জন্যই তৈরি করছে গেমস ও অ্যাপ। আবার ভালোর পক্ষে দাঁড়ানোর প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও ফেসবুকের ব্যবহার আমরা সারা বিশ্বে দেখছি। সবই কিন্তু করছে ফেসবুকের তরুণ ব্যবহারকারীরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাণিজ্যিক সুবিধার বাইরে আরও হাজারটা সুবিধা আছে। তাই অভিভাবকদেরও খেয়াল রাখতে হবে, তাঁদের সন্তানেরা যেন ভালো কাজেই ইন্টারনেট বা ফেসবুক ব্যবহার করে। দেশের বাইরের খান একাডেমির কথাই ধরুন। অনলাইনে কত কিছু শেখাচ্ছে। ফেসবুকও কিন্তু একই রকম কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিচিত্র সব বিষয়ে আগ্রহী মানুষেরা মিলে গ্রুপ খুলছে। সেখানে মতবিনিময় হচ্ছে, নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি হচ্ছে। আগ্রহ অনুযায়ী এই গ্রুপগুলোতে যুক্ত হওয়া, আদর্শ ব্যক্তিত্বকে অনুসরণ করা, বিশেষজ্ঞের শরণ নেওয়া—ফেসবুকে সবই কিন্তু সম্ভব। আবার এটাও ঠিক, ফেসবুকে কিছু দেখলেই চোখ বুজে বিশ্বাস করাও বোকামি। এটা গোটা ইন্টারনেটের বেলাতেই প্রযোজ্য। ফেসবুককে খবরের উৎস হিসেবে নেওয়ায় কোনো সমস্যা আমি দেখি না। এটি আর দশটি ওয়েবসাইটের মতোই। তবে খবর পেলে তা যাচাই করা বুদ্ধিমানের কাজ। এ কারণে এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের স্লোগান ছিল, ‘সত্য–মিথ্যা যাচাই আগে, ইন্টারনেটে শেয়ার পরে’।
ফেসবুক বা ইন্টারনেটে আসক্তি এখন বড় চিন্তার বিষয়। আদতে এই ‘স্ক্রিন টাইম’ তো কেবল ফেসবুককে ঘিরেই নয়। অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখাও স্ক্রিন টাইমের মধ্যে পড়ে। তাই তরুণ–তরুণীদের এ বিষয় অবশ্যই সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদের ভূমিকা বেশি। কারণ, একদম ছেলেবেলা থেকে এই অভ্যাস গড়ে উঠছে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ফোন, কম্পিউটার ব্যবহারের নিয়ম করে দিলে সমাধান পাওয়া সম্ভব। আর তরুণ–তরুণীদেরকে নিজেদের ভালোর জন্যই স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সৈয়দ আলমাস কবীর, সভাপতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)