স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী
ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তি ও ভূরাজনীতি
একাত্তরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন মঈদুল হাসান। পরবর্তী সময়ে তিনি লিখেছেন মূলধারা ’৭১ এবং উপধারা একাত্তর, মার্চ-এপ্রিল নামে দুটি বই। বিভিন্ন দেশে অবমুক্ত হওয়া মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র ঘেঁটে ও তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি লিখছেন আরও একটি বই। তাঁর প্রকাশিতব্য সেই বইয়ের দ্বাদশ অধ্যায়ের দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশিত হলো আজ।
কলকাতায় সোভিয়েত প্রতিনিধি গুরগিয়ানভের সঙ্গে ১৫ জুন অনানুষ্ঠানিক গোপন আলোচনা প্রথম দফা বৈঠকে শেষ হয়নি। সেই পরিতৃপ্তি নিয়ে আমি পরদিন সকাল সাতটায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে বিষয়টি সবিস্তার জানালাম।
তাজউদ্দীন বললেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষস্থানীয় নীতি উপদেষ্টা পি এন হাকসারের আস্থাভাজন একজন সেদিনই দুপুরে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। তাঁকে আমি চিনি। পুরো বিষয়টি তাঁকে যেন জানাই।
দুপুরবেলা পূর্বনির্ধারিত স্থানে দেখা করতে এলেন প্যাট্রিয়ট পত্রিকার কলকাতা শাখার প্রধান সংবাদদাতা সেই প্রফুল্ল রায়চৌধুরী। যিনি আগে আমার কাছে এসেছিলেন পত্রিকাটির প্রধান অরুণা আসফ আলীর সঙ্গে।
এরপর আরও তিনবার, সপ্তাহে একবার করে সোভিয়েত প্রতিনিধি গুরগিয়ানভের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। প্রধানত পূর্ব বাংলার সমাজ ও অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য এবং রাজনীতির গতিধারা বিষয়ে। একবার কেবল সর্বসাম্প্রতিক রাজনৈতিক দলের ঐক্য-অনৈক্যের দোলাচল নিয়ে আলোচনা হয়।
একবার গুরগিয়ানভের প্রশ্ন ছিল, যে দেশের কোনো খনিজ সম্পদ নেই, একটি বা দুটির বেশি রপ্তানি করার মতো পণ্য নেই, যা দিয়ে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং প্রয়োজনীয় মূলধন গঠন সম্ভব; দু-একটির বেশি বৃহৎ শিল্প স্থাপনা নেই; ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন বড় জনগোষ্ঠী নেই, সেই দেশ কীভাবে তার আত্মনির্ভর সত্তা বজায় রাখতে সমর্থ হবে?
আমি স্বীকার করেছি, আমারও এসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। তবে প্রাণের ভয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য মানুষ যারা এখানে এসেছে এবং প্রতিদিন আসছে, তারা এসব প্রশ্নের কোনো জবাব চায় না। তারা দেশে ফিরে যেতে চায় এবং তা কেবল সম্ভব শত্রুকে বিতাড়ন করেই। সে কথাটিই তারা বিশ্বাস করে।
প্রতিবার গুরগিয়ানভের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রফুল্ল রায়চৌধুরী আসতেন। তিনি আমাদের আলোচনার বিবরণ সংগ্রহ করে নিয়ে যেতেন পি এন হাকসারকে পাঠিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তির পটভূমি
আমি অনুমান করেছিলাম, এর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তামূলক কোনো ব্যবস্থায় পৌঁছানোর জন্য পি এন হাকসারের সঙ্গে ১ জুন যে আলোচনা আমার হয়েছিল, সম্ভবত সে ব্যাপারেই তিনি সচেষ্ট। সে উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম সম্পর্কে সোভিয়েত মনোভাবের ওঠানামা ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব জানার জন্য তাঁর এমন আগ্রহ।
অনুল্লেখযোগ্য আমার সেই অনুমান সঠিক হয়ে ওঠে পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালের দিকে। যখন দিল্লির নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরিতে রক্ষিত পি এন হাকসারের ফাইলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিংয়ের ১৯৭১ সালের একটি রিপোর্ট আমি দেখতে পাই।
পি এন হাকসার একাত্তরের ৫ জুন অরুণা আসফ আলী মারফত কলকাতায় সোভিয়েত প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা শুরু করার ব্যবস্থা আমাদের জানিয়েছিলেন। সেদিনই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং মস্কোতে উপস্থিত হয়ে সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঁদ্রে গ্রোমিকোর সঙ্গে দেখা করেন। তখন সরদার শরণ সিং আশঙ্কা প্রকাশ করে গ্রোমিকোকে জানান, তাঁদের প্রাপ্ত খবরানুসারে পাকিস্তান ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত বাংলাদেশের বিদ্রোহী সেনাদের ক্যাম্পসমূহে আকস্মিক আক্রমণ করতে পারে। একই সময়ে চীনও পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য কিছু কৌশলী তৎপরতা শুরু করতে পারে।
গ্রোমিকো শরণ সিংকে বলেন, এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। কিন্তু তা মোকাবিলা করার মতো দুই দেশের মধ্যে যে রকম দলিল থাকা প্রয়োজন, তা এখনো অসম্পাদিত। এ ছাড়া তিনি (শরণ সিং) একটু পরে যখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন, তখন তাঁর অভিমতই এ ব্যাপারে কার্যকর হবে।
সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিনের কাছেও সরদার শরণ সিং একই আশঙ্কা পুনর্ব্যক্ত করেন। উত্তরে কোসিগিন বলেন, এ ধরনের আক্রমণের আশঙ্কা সম্পর্কে তাঁদের সূত্র থেকে তিনি অবগত নন।
বিষয়টি সরদার শরণ সিং দ্রুত দিল্লিকে জানান। পরদিন দিল্লি থেকে তাঁকে জানানো হয়, ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তি খসড়া নিয়ে যে আলোচনা ১৯৬৯ সালে মুলতবি হয়ে গিয়েছিল, তা অচিরেই শুরু করা হবে। দিল্লি থেকে পি এন হাকসার মস্কোতে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত ডি পি ধরকে সর্বশেষ পরিস্থিতির কথা জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন।
১৯৬৯ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ছয় মাস মস্কোতে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় ডি পি ধর ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আলোচনা সেই সময় স্থগিত হয়ে গিয়েছিল প্রধানত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দোদুল্যমানতায়।
সে সময় ইন্দিরা গান্ধীর মন্ত্রিসভার ভেতরে ছিল সিন্ডিকেট নামে পরিচিত পাশ্চাত্যপন্থী মন্ত্রীদের একটি বড় চাপ। অন্যদিকে বৃহৎ পুঁজিপতি
মহলের অভিমত এবং জওহরলাল নেহরুর শাসনামল থেকে অনুসৃত নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতি অনুসরণের ঐতিহ্য প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত থেকে ইন্দিরা গান্ধী পিছিয়ে আসেন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষেও এ ধরনের চুক্তি সম্পাদন নিয়ে সম্ভবত কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। কেননা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অপর দেশ তথা পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের পঞ্চাশের দশকের বৈরী সম্পর্ক ১৯৬৯ সালের আগে থেকে পরিবর্তিত হতে শুরু করেছিল। অর্থাৎ ১৯৬২ সালের চীন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ সংঘটিত হওয়ার পর।
পঞ্চাশের দশকে পাকিস্তান ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নবিরোধী একাধিক পাশ্চাত্য সামরিক জোটভুক্ত একটি দেশ। অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে আমেরিকার ওপর সর্বতোভাবে নির্ভরশীল। পক্ষান্তরে নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতির অনুসারী ভারতের প্রতি আমেরিকার সম্পর্কের শীতলতা ছিল দৃশ্যমান।
চীন দৃশ্যত ছিল ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন দেশ। কিন্তু ১৯৬২ সালে হিমালয় পর্বতমালায় এই দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে চলা গোপন বিরোধ হঠাৎ প্রকাশ্য ও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে কাশ্মীর সন্নিহিত লাদাখ ও আসাম সন্নিহিত নেফা অঞ্চলে। নেফা এখন অরুণাচল নামে পরিচিত।
এই সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর ভারতকে বিপুল সামরিক সাহায্য দেওয়া শুরু করে আমেরিকা। যার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও তৎপর হয়ে ওঠে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক সরঞ্জাম এবং ভারী শিল্প স্থাপনে সহায়তা লাভের জন্য। এরপর ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তা বন্ধ করা এবং তার পরের বছর তাসখন্দে দুই দেশের মধ্যে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়ন এক সফল মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে আমেরিকা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দুই দেশেই তার অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
সোভিয়েত ইউনিয়নকে আইয়ুবের প্রতিশ্রুতি
যুদ্ধে সমরাস্ত্রের ক্ষয়ক্ষতি বিপুল হওয়ায় এবং বৈদেশিক সরবরাহের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল থাকায় পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান মরিয়া হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নকে গোপনে এক অসাধারণ প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে সমরাস্ত্র সরবরাহের অনুরোধ জানান। পেশোয়ার শহরের অদূরে পাকিস্তানের একটি গোপন বিমানঘাঁটি ছিল। সেটি ব্যবহার করে আমেরিকা পঞ্চাশের দশক থেকে নিরাপদ উচ্চতায় উড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক স্থাপনাসমূহের ছবি তুলে এনেছে। আইয়ুব খান সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিশ্রুতি দেন, বাদাবের নামক সেই গোপন বিমানঘাঁটি আমেরিকার ব৵বহারের লিজ চুক্তির পরবর্তী নবায়ন বন্ধ করে দেওয়া হবে, যদি সোভিয়েত সরকার পাকিস্তানকে প্রত্যাশিত সমরাস্ত্র সরবরাহে সম্মত থাকে।
১৯৬৮ সালের প্রথম দিকে আইয়ুব গুরুতর হার্ট অ্যাটাকের পর সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভের আগেই রোগশয্যা থেকেই আমেরিকার সঙ্গে বাদাবের বিমানঘাঁটির লিজ বাতিলসংক্রান্ত চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
এদিকে আইয়ুবের গুরুতর অসুস্থতার মধ্যে শাসনতন্ত্রের সুস্পষ্ট বিধান লঙ্ঘন করে প্রধান সেনাপতি ইয়াহিয়া খান রাষ্ট্রের প্রতিটি সিদ্ধান্ত এবং প্রেসিডেন্টের সমস্ত চিঠিপত্রের ওপর নজর রাখতেন। ফলে বাদাবের বিমানঘাঁটি ব্যবহারে আমেরিকানদের দেওয়া লিজ বাতিলের সিদ্ধান্ত ইয়াহিয়ার অজানা থাকেনি। এর প্রায় ৯ মাস পর পাকিস্তানের দেশরক্ষা বাহিনী ও প্রশাসনযন্ত্রের ওপর আইয়ুব খানের কার্যকর ক্ষমতা প্রায় লোপ পায়। তখন রাষ্ট্রক্ষমতা বিনা রক্তপাতে দখল করার জন্য উদ্গ্রীব ইয়াহিয়া খানের পক্ষে আমেরিকানদের সমর্থন আদায় করার জন্য বাদাবের বিমানঘাঁটির লিজ প্রত্যাহারসংক্রান্ত আইয়ুবের প্রচেষ্টা কীভাবে পাল্টানো হয়েছিল, তা কোনো জটিল অনুমানের বিষয় নয়।
ইয়াহিয়ার ক্ষমতারোহণের পেছনে আমেরিকা
সোভিয়েত প্রতিনিধি গুরগিয়ানভের সঙ্গে তৃতীয় দফা বৈঠকের পর ৩০ জুন তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আমার অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আমি তাঁর কাছে পাকিস্তানে ১৯৬৯ সালের মার্চে ক্ষমতার হাতবদল সম্পর্কে বাদাবের বিমানঘাঁটি লিজ বাতিলের বিষয়টি উল্লেখ করি। আমি তাঁকে জানাই, বিষয়টি কোথাও এর আগে প্রকাশ হয়নি বটে। কিন্তু ইসলামাবাদের কেন্দ্রীয় সরকারের সংবেদশীল নানা অংশে যাতায়াত আছে এমন এক অভিজ্ঞ সাংবাদিক ইয়াহিয়ার ক্ষমতা দখলের পর আমাকে এবং ঢাকার আরও কয়েকজনকে বিষয়টি অবহিত করেন। সেই সাংবাদিক হলেন মার্কিন বার্তা সংস্থা ইউপিআইয়ের সংবাদদাতা আসরার আহমদ। তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতারোহণের স্বার্থে এবং আমেরিকার সমর্থন লাভের আশায় আইয়ুবের বাদাবের বিমানঘাঁটির লিজ বাতিলের সিদ্ধান্ত ইয়াহিয়া সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে জানিয়েছিলেন।
আসরার আহমদ আরও জানিয়েছিলেন, আমেরিকানরা ইয়াহিয়ার ক্ষমতারোহণের পেছনে সক্রিয় রয়েছে। অচিরেই তা প্রমাণিত হবে, যদি আমেরিকা পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সমরাস্ত্র এবং সামরিক যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে পাকিস্তানের ক্ষয়িত সমরসম্ভার পুনরায় কর্মোপযোগী করে তুলতে উদ্যোগী হয়।
বাস্তব ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়া যে কয়েক মাস আগে শুরু হয়ে গেছে, প্রথম তা জানা যায় বার্তা সংস্থা সূত্রে পাওয়া নিউইয়র্ক টাইমস–এর ২৫ জুনের খবরে। নির্ভরযোগ্য এই আমেরিকান দৈনিক পত্রিকার অনুসন্ধানী রিপোর্ট অনুসারে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর জন্য অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই তৃতীয় জাহাজ ২ এপ্রিল নিউইয়র্কের বন্দর থেকে করাচির উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে।
কাজেই সোভিয়েত সরকারেরও অজানা থাকার কথা ছিল না যে ইয়াহিয়ার পেছনে মার্কিন সরকারের সমর্থন যথেষ্ট প্রবল। এরপরও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে সোভিয়েত সমর্থন, এমনকি সহানুভূতির অভাব ছিল আমাদের জন৵ হতাশা ও উদ্বেগের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন ও আমি মনে করতাম, এই সহানুভূতি না থাকায় সোভিয়েত সরকার ভারতকেও হয়তো সংশ্লিষ্ট ঝুঁকির বিষয় বিবেচনা করে মুক্তিযুদ্ধকে সহায়তা করার প্রশ্নে সতর্ক রাখার চেষ্টা করবে। এ ছাড়া তারা যদি ভারতের নিরাপত্তা বিধানের কোনো প্রতিশ্রুতি না দেয়, তাহলে ভারতের একার পক্ষে তাদের ভূখণ্ডে অবস্থিত বিদ্রোহী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর সেনাদের আবাসস্থলের ওপর পাকিস্তানের সম্ভাব্য আক্রমণের প্রতিরোধ কত দূর সম্ভব হবে, তা আমাদের জানা ছিল না। সেই অবস্থায় ভারতের জনমত যে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের সংগ্রামকে সমর্থন করতে গিয়ে এত শরণার্থীর বোঝা বয়ে চলবে, সে ভরসা হয়ে উঠছিল ক্রমেই সংকুচিত।
নিরাপত্তার সন্ধানে ভারত সরকার তখন সক্রিয় আমরা জানতাম। কিন্তু কত দূর তারা অগ্রসর হতে পেরেছে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা আমাদের দেওয়া হয়নি। তেমন সংবাদ আদান-প্রদানের একমাত্র মাধ্যম ছিলেন পি এন হাকসার ও তাজউদ্দীন। (চলবে)