ব্যবহার বাড়ছে স্যানিটারি প্যাডের

এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘২০৩০ সালের মধ্যে মাসিককে জীবনের একটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা’।

ফাইল ছবি

মৌসুমী ইসলাম গ্রামে থাকাকালে মাসিকের সময় পুরোনো কাপড় ধুয়ে বারবার ব্যবহার করতেন। যদিও স্যানিটারি প্যাডের কথা তাঁর অজানা ছিল না। কিন্তু দোকানে গিয়ে কিনতে অস্বস্তি বোধ করতেন। তবে ঢাকায় আসার পর নিয়মিত প্যাড ব্যবহার করছেন মৌসুমী। নারীর জন্য মাসিকের সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

নারীর প্রজননস্বাস্থ্যের সঙ্গে বিষয়টি জড়িত। এ সময় সুরক্ষিত না থাকলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষজ্ঞরা মাসিকের সময় জীবাণুমুক্ত থাকার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য ব্যবহারের ওপর জোর দেন।

আজ ২৮ মে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস। জার্মানির অলাভজনক সংস্থা ওয়াশ ইউনাইটেডের উদ্যোগে মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘২০৩০ সালের মধ্যে মাসিককে জীবনের একটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা’।

স্যানিটারি প্যাড নারীর স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য। এটি সহজলভ্য করতে এসিআই নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
মো. কামরুল হাসান, এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডসের ব্যবসায় পরিচালক

বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মৌসুমীর মতো অনেকেই কাপড় ছেড়ে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করছেন। সহপাঠীদের অনেককেই তিনি দেখেছেন, নিজেরা কিনেই প্যাড ব্যবহার করছেন।

এ ছাড়া প্যাড আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর। প্যাড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বলছে, দেশে প্যাডের ব্যবহার প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে যে অনুপাতে বাড়ার কথা ছিল, তা হয়নি। দেশে নারীশিক্ষার হার ও কর্মসংস্থান বেড়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৮ শতাংশ।

সমাজে নারীর মাসিক নিয়ে এখনো খোলাখুলি আলোচনা হয় না। মেয়েরা প্যাড কিনতে গেলে অস্বস্তি বোধ করেন। বিশেষ করে মফস্বল ও গ্রামে এটা বেশি। অসচেতনতা, লজ্জা, সহজলভ্য না হওয়ার কারণে এখনো স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের হার কম। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও ওয়াটারএইডের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে ২০১৮’ অনুযায়ী মাত্র ৪৩ শতাংশ কিশোরী স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে। এ ছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের ২৯ শতাংশ এ প্যাড ব্যবহার করে।

স্যানিটারি প্যাড উৎপাদনকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ২০১৪ সালে স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহার ২১ শতাংশের মতো ছিল। তা এখন হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। এ ছাড়া এ পণ্যের বাজার ৪৫০ কোটি টাকার। বাজার বাড়ার হার ২০ শতাংশের বেশি।

স্কয়ার টয়লেট্রিজ, এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস, সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি), প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, বসুন্ধরা, আকিজ, প্রাণসহ বিভিন্ন কোম্পানির স্যানিটারি প্যাড বাজারে পাওয়া যায়।

স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার বাড়ার কারণ হিসেবে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা জেসমিন জামান বলেন, সচেতনতা, প্রচার, হাতের নাগালে পাওয়াসহ সরকারি–বেসরকারি খাতে নারীর মাসিক নিয়ে নানান কাজ হয়েছে। তবে তিনি বলেন, দেশে নারীশিক্ষার হার ও কর্মসংস্থান যে হারে বেড়েছে, সে অনুযায়ী স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহার বাড়েনি। মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা আরও বাড়াতে পারলে স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহারও বাড়বে।

এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডসের ব্যবসায় পরিচালক মো. কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, স্যানিটারি প্যাড নারীর স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য। এটি সহজলভ্য করতে এসিআই নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে স্যানিটারি প্যাডের দাম তুলনামূলক বেশি। ১০টির একটি প্যাকেট কিনতে ১০০ টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়। সরকার স্যানিটারি প্যাড উৎপাদন ও কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, নিত্যপণ্যসহ বাজারে প্রায় সব জিনিসের দাম বাড়লেও স্যানিটারি প্যাডের দাম নতুন করে বাড়েনি। যদিও বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম অনেক বাড়তি।