বৈদেশিক কর্মসংস্থানে বড় ধাক্কার শঙ্কা

উড়োজাহাজের টিকিট কেটে বিদেশে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা প্রায় ৩০ হাজার প্রবাসী কর্মী অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।

বিমান
প্রতীকী ছবি

রেস্তোরাঁর কাজ নিয়ে প্রথমবার সৌদি আরব যাবেন চুয়াডাঙ্গার মো. লাভলু। ১৯ এপ্রিল তাঁর ফ্লাইট নির্ধারিত ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারঘোষিত লকডাউনের আওতায় বন্ধ হয়ে গেছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল। এতে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন লাভলু। তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে সব কাজ শেষ করেছি। এখন কীভাবে যেতে পারব, বুঝতেছি না।’

লাভলুর মতো অবস্থা প্রায় ৩০ হাজার প্রবাসী কর্মীর। সব কাজ শেষে উড়োজাহাজের টিকিট কেটে বিদেশে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তাঁরা। কিন্তু ফ্লাইট বন্ধে ঘোর অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তাঁরা।

করোনার প্রভাবে গত বছর প্রায় সাত মাস বন্ধ ছিল বিদেশে যাওয়া। ওই সময় বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বাংলাদেশে থেকে কোনো কর্মী পাঠানো যায়নি। এরপর চার মাস ধরে বিদেশে কর্মী যাওয়া আস্তে আস্তে বাড়ছিল। কিন্তু নতুন করে আবার যদি বন্ধ হয়ে হয়ে যায় তাহলে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সেটা বড় ধাক্কা হয়ে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশে বাড়তে থাকা করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে গত সোমবার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। এর আগেই গত রোববার এক প্রজ্ঞাপন দিয়ে ১৩ এপ্রিল রাত ১২টার পর থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সব ফ্লাইট বন্ধের কথা জানায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

বিদেশে কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর ১০ লাখ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও গেছে মাত্র ২ লাখ ১৭ হাজার। ধাক্কা কাটিয়ে উঠে এ বছর শুরুটা মোটামুটি ভালোই হয়েছিল। কিন্তু নতুন করে সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে গেল। সরকারের সিদ্ধান্তে বিদেশি নিয়োগদাতারাও অবাক হয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের দেশ থেকে কোনো বাধা নেই। তবে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ফের নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। আর এটি হলে আবার লম্বা সময়ের জন্য কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে যাবে।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, নভেম্বরে চালু হলেও গত ডিসেম্বর থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানো বাড়তে শুরু করে। ডিসেম্বরে গেছেন ২৮ হাজার ৩৯৮ জন। জানুয়ারিতে ৩৫ হাজার ৭৩২, ফেব্রুয়ারিতে ৪৯ হাজার ৫১০ এবং মার্চে ৬১ হাজার ৬৫৩ জন।

বিদেশে কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক বলেন, ১৩ (গতকাল) এপ্রিল দিবাগত রাতে ২৬ জন যাত্রী আছে তাঁর। কর্মীরা আতঙ্কে আছেন। পাঠানো যাবে কি না, বোঝা যাচ্ছে না। দুই মাস আগে টিকিট করা।

এ বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্বিগুণ টাকা দিয়ে উড়োজাহাজের টিকিট নেওয়া। বিদেশে থেকে ফ্লাইট খালি এলেও তো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বিশেষ ফ্লাইটে হলেও কর্মী পাঠানো চালু রাখা উচিত।’

ফ্লাইট চালুর দাবিতে গতকাল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের কাছে চিঠি দিয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদ। চিঠিতে তারা জানায়, জনশক্তি খাতকে জরুরি খাতের আওতায় রেখে বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখা হোক। যেহেতু কর্মী গ্রহণকারী কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, তাই বাংলাদেশের ফ্লাইট চালু রাখা উচিত। এ সংগঠনের সভাপতি টিপু সুলতানের প্রশ্ন, ‘তৈরি পোশাক খাত যদি বিধিনিষেধের বাইরে থাকতে পারে, বিদেশে কর্মী পাঠানো কেন বন্ধ হয়ে যাবে?’

এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, সামগ্রিক বিষয় চিন্তা করেই সরকার বিধিনিষেধ দিয়েছে। বিদেশে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে দু–এক দিনের মধ্যেই মন্ত্রী পর্যায়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা হতে পারে।

অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, অন্য শিল্পের মতো অভিবাসন খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এ খাত বিবেচনায় আসে না। এটি আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের ঘাটতি। এটিকে জরুরি খাতের আওতায় রেখে চালু রাখা যেতে পারে।

এদিকে প্রবাসীদের কথা ভেবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর দাবি জানিয়েছে ট্রাভেল এজেন্সি মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) ও জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা)। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করার দাবি জানিয়ে তাঁরা বলছেন, হাজার হাজার বিদেশগামী কর্মী টিকিট নিয়ে অপেক্ষা করছেন। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফ্লাইট বন্ধ থাকলে কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।