বেসরকারিভাবে দেশে ফাইজারের টিকা আমদানির উদ্যোগ
শর্ত মানলে অনুমতি দেবে সরকার। কার্যকর ও নিরাপদ টিকার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
ফাইজারের করোনার টিকা বেসরকারিভাবে দেশে আমদানির উদ্যোগ শুরু হয়েছে। ফাইজারের পণ্য আমদানি ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান এ উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, সব শর্ত মেনে টিকা আনলে সরকার অনুমতি দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের পণ্য এ দেশে আমদানি ও সরবরাহ করে একাধিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে জনতা ট্রেডার্স ও রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস অন্যতম। গতকাল বৃহস্পতিবার জনতা ট্রেডার্সের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা ফাইজারের টিকা আনার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। রেডিয়েন্টের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেছেন, তাঁরা ফাইজারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
ফাইজারের টিকার জন্য মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন। এমন তীব্র নিম্ন তাপমাত্রায় টিকা রাখার ব্যবস্থা বাংলাদেশে নেই।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো ওষুধ ও টিকার মতো করোনার টিকা আমদানি এবং এ দেশে ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আবেদনসহ কাগজপত্র পেলে দ্রততার সঙ্গে অনুমোদন দেওয়া হবে।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ওষুধশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, টিকা আমদানি ও অনুমোদনের জন্য টিকার সফল পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যকর ও নিরাপদবিষয়ক সনদ, নির্দিষ্ট পরিমাণ উৎপাদনের (লট) সনদ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে।
বেসরকারি উদ্যোগে টিকা আনা যাবে না, এমন কথা কোথাও বলা হয়নি।
জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের যৌথ উদ্যোগে উদ্ভাবিত টিকার কার্যকর ও নিরাপদ বলে অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। শিগগির যুক্তরাজ্যে এ টিকার ব্যাপক প্রয়োগ শুরু হবে বলে দেশটির সরকার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যে টিকার অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষের মনেও প্রশ্ন জেগেছে, কবে নাগাদ এ টিকা পাওয়া যাবে।
৬০ থেকে ৮০ ডিগ্রি ঋণাত্মক তাপমাত্রা ধরে রাখতে সক্ষম এমন দুটি ‘কোল্ড চেম্বার’ বিদেশ থেকে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। একেকটি চেম্বারে ৮০ হাজার টিকা রাখা সম্ভব।
জনতা ট্রেডার্সের মহাব্যবস্থাপক এ কে এম রাজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভারতের বাজারের জন্য ফাইজারের আঞ্চলিক কার্যালয় ভারতে। ওই কার্যালয়ের সঙ্গে প্রতিদিন তাঁদের যোগাযোগ হচ্ছে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভারতের কার্যালয়ে আসার পরপরই তা বাংলাদেশে অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে জনতা ট্রেডার্স। তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) সভায় ফাইজারসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের টিকা অনুমোদনের সম্ভাবনা আছে। ওই সভার পরই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যেতে পারে।
ফাইজারের টিকার জন্য মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন। এমন তীব্র নিম্ন তাপমাত্রায় টিকা রাখার ব্যবস্থা বাংলাদেশে নেই। এ ব্যাপারে এ কে এম রাজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘৬০ থেকে ৮০ ডিগ্রি ঋণাত্মক তাপমাত্রা ধরে রাখতে সক্ষম এমন দুটি “কোল্ড চেম্বার” বিদেশ থেকে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। একেকটি চেম্বারে ৮০ হাজার টিকা রাখা সম্ভব।’ টিকার দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একেকটি টিকার দাম ১ হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা পড়তে পারে।
সরকার বিনা মূল্যে দেশের মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা বলেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী একাধিক সভায় বলেছেন, সরকার সম্ভাব্য সব উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যদিকে করোনার টিকাবিষয়ক খসড়া জাতীয় পরিকল্পনায় টিকা সংগ্রহের দুটি উৎসের কথা বলা হয়েছে। প্রথমত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে ভর্তুকি মূল্যে টিকা নেবে সরকার। দ্বিতীয়ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত টিকা সরকারকে সরবরাহ করবে ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো।
সুযোগের অপব্যবহার করে কেউ যেন অতি মুনাফা না করে, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া দরকার। ওই বিষয়ের পাশাপাশি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মতো কোনো সমস্যা কীভাবে নিরসন হবে, তার ওপর সরকারের কড়া নজরদারি রাখতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে টিকা আনা যাবে না, এমন কথা কোথাও বলা হয়নি।
উৎপাদন থেকে শুরু করে শরীরে টিকা প্রয়োগ পর্যন্ত ‘কোল্ড চেইন’ বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সুযোগের অপব্যবহার করে কেউ যেন অতি মুনাফা না করে, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া দরকার। ওই বিষয়ের পাশাপাশি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মতো কোনো সমস্যা কীভাবে নিরসন হবে, তার ওপর সরকারের কড়া নজরদারি রাখতে হবে।