বেশির ভাগ জেলায় প্রচারে নামেনি বিএনপি
>
- সংঘাতের আশঙ্কায় শেষ দিনেও নামেননি বিএনপির অধিকাংশ প্রার্থী
- তবে ১৯ জেলার সব কটি আসনে মিছিল ও জনসভায় সরব ছিল
- আরও চার-পাঁচটি জেলায় কিছু কিছু আসনে মিছিল–জনসভা হয়েছে
- বৃহস্পতিবার আ. লীগসহ মহাজোটের প্রার্থীরা ব্যাপকভাবে প্রচারে ছিলেন
- এই অবস্থায় বিএনপি নামলে সংঘাত ও রক্তপাতের আশঙ্কা ছিল
- সংঘাত এড়াতে গতকাল বড় ধরনের কোনো প্রচারে যাননি বিএনপি
নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনেও বেশির ভাগ জেলায় বিএনপির প্রার্থীরা প্রচারে নামেননি। দলটির নেতারা বলেছেন, সংঘাত ও গ্রেপ্তার এড়ানোর কৌশল হিসেবে অধিকাংশ এলাকায় প্রচারে নামেননি তাঁরা। তবে ১৯ জেলার সব কটি আসনে এবং আরও চার-পাঁচটি জেলায় কিছু কিছু আসনে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে মিছিল ও জনসভা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগসহ ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রার্থীরা ব্যাপকভাবে প্রচারে ছিলেন। এই অবস্থায় বিএনপি নামলে সংঘাত ও রক্তপাতের আশঙ্কা ছিল। সেটা এড়াতে গতকাল বড় ধরনের কোনো প্রচারের দিকে যাননি বলে বিএনপির বেশ কজন প্রার্থী জানিয়েছেন।
ঢাকার তিনটি আসনে সীমিত প্রচার
শুরু থেকেই প্রচারের ক্ষেত্রে কোণঠাসা ছিল বিএনপি। গতকালও তারা তেমন কোথাও নামেনি। ঢাকা-১৮ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী জেএসডি নেতা শহীদ উদ্দিন মাহমুদ এবং তাঁর সমর্থকেরা ভয়ে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে বের হননি বলে তাঁরা জানিয়েছেন। ওই আসনের নির্বাচনী কার্যালয়ের দুই দিকে উত্তরার ৪ নম্বর সড়কে দিনভর পুলিশের গাড়ি ছিল। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরাও ওই সড়কে অবস্থান নেন।
ঢাকা-৪ আসনে বিএনপির সালাহ্উদ্দিন আহমেদ গতকাল সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, কয়েক দিন ধরে তাঁর বাসার সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা পাহারা দিচ্ছেন। তাই তিনি বের হতে পারছেন না।
কোনো গণসংযোগ করেননি ঢাকা-১১ আসনে বিএনপির প্রার্থী শামীম আরা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সব মিলিয়ে তাঁর প্রায় ১ হাজার ২০০ কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।
ঢাকা-৮ আসনের মির্জা আব্বাস ও ঢাকা-৯ আসনে তাঁর স্ত্রী আফরোজা আব্বাসও প্রচারে নামেননি। তবে মির্জা আব্বাস গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, তাঁর ওপর দুবার এবং আফরোজা আব্বাসের ওপর চারবার আক্রমণ হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত ৭০০ থেকে ৮০০ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তবে ঢাকা-২ আসনে ইরফান ইবনে আমান, ঢাকা-৩-এ গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ঢাকা-৭ আসনে মোস্তফা মোহসীন মন্টু গণসংযোগ করেছেন।
১৯ জেলায় প্রচারে সরব বিএনপি
কিছু জেলায় প্রচারে সরব ছিলেন বিএনপি প্রার্থীরা। বগুড়ায় পথসভা, মিছিল, জনসংযোগ সবই ছিল। পঞ্চগড়েও জনসভা করেছেন প্রার্থীরা। সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা, রাজশাহী, মৌলভীবাজার, সিলেট, নীলফামারী, বরগুনা, মাদারীপুর, যশোর, রাঙামাটি, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ জেলার আসনগুলোতে গণসংযোগ চালিয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। শেরপুর-১ আসনে প্রচার চললেও বাকি দুটি আসনে প্রচার হয়নি। চট্টগ্রামে ১৬ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রচারণায় ছিলেন ৭ জন। চট্টগ্রাম নগর এলাকার তিন প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান ও আবু সুফিয়ান গতকাল দিনভর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে সময় কাটিয়েছেন।
রংপুরের ছয়টি আসনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ দিনের প্রচার চালিয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থীরা। ফরিদপুরেও প্রচারে সরব ছিলেন বিএনপির প্রার্থীরা। গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন তাঁরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আসনগুলোতে গণসংযোগের পাশাপাশি জনসভাও করেছেন প্রার্থীরা। এ ছাড়া দিনভর ধানের শীষের প্রচার ছিল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আসনে। তাঁর নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁও-১ আসনে সকালে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ও মেয়েরা হেঁটে হেঁটে শহরে প্রচারণা চালান। বিকেলে শহরে ধানের শীষের পক্ষে মিছিল বের হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে ধানের শীষের আলাদা আলাদা মিছিল হয়েছে। টাঙ্গাইলের আটটি সংসদীয় আসনের মধ্যে টাঙ্গাইল-১, ৪, ৭ ও ৮ আসনে গণসংযোগে নেমেছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। তবে কোনো সভা-সমাবেশের খবর পাওয়া যায়নি।
বেশির ভাগ জেলায় প্রচারহীন
সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের বাধা, পুলিশের হয়রানি এড়াতে দেশের অধিকাংশ জেলায় গতকাল প্রচারে ছিলেন না ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা। কুষ্টিয়ার চারটি আসনের একটিতেও প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি। পটুয়াখালীর চারটি আসনেও কোনো প্রচারণা ছিল না। পটুয়াখালী-২ আসনের প্রার্থী সালমা আলম বলেন, ‘আমার সঙ্গে কেউ বের হলেই পুলিশের কাছে তাঁর নাম চলে যায় এবং তাঁকে খোঁজা শুরু করে।’
মেহেরপুরে কেউ মাঠে নামতে পারেননি। মেহেরপুর-২ আসনের প্রার্থী জাভেদ মাসুদ মিল্টন অনেকটা গৃহবন্দী হয়ে আছেন। শরীয়তপুরের তিনটি আসনেই মাঠছাড়া বিএনপির প্রার্থীরা। এখানকার তিন প্রার্থী ঢাকায় অবস্থান করছেন। শরীয়তপুর-৩ আসনের প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহম্মেদ হামলায় আহত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। গোপালগঞ্জের তিনটি আসনের একটিতেও মাঠে দেখা যায়নি বিএনপির প্রার্থীদের। কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনের চারটিতে বিএনপির প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রচারে বাধাদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জামালপুর জেলার তিনটি আসনে বিএনপির প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকেরা শেষ দিনেও হামলা ও গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় প্রচারে নামেননি বলে দলীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন। বরিশাল জেলার ছয়টি আসনে বিএনপির বা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মাঠে কোনো প্রচার ছিল না। ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে একটি মিছিল করার কথা থাকলেও পরে সেটি স্থগিত করা হয়। এ জেলায় সীমিত পরিসরে কিছু গণসংযোগ হয়েছে।
নাটোর-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী প্রচারে নামলেও বাকি তিন আসনের প্রার্থীরা বাড়িতে অবস্থান করেন সারা দিন। লক্ষ্মীপুর-১, ২ ও ৩ আসনেও বিএনপি বা জোটের প্রার্থীদের গতকাল কোনো প্রচার ছিল না। নিরাপত্তা চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন এখানকার একাধিক প্রার্থী। সাতক্ষীরায় প্রচারে নামতে পারেনি বিএনপি। ঝালকাঠিতেও ছিল না কোনো প্রচার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে গণসংযোগ চালালেও বাকি পাঁচটি আসনে প্রচার চালাতে পারেননি ধীনের শীষের কর্মীরা। নেত্রকোনা-১ আসনের কায়সার কামাল সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁকে ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানি করায় প্রচার চালাতে পারেননি। নরসিংদীর পাঁচটি আসনেও প্রচার থেকে দূরে ছিলেন ধানের শীষের প্রার্থীরা।
রাজবাড়ী, পিরোজপুর, বান্দরবান, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, কক্সবাজার, মাগুরা জেলার আসনগুলোতেও প্রচারে ছিল না বিএনপি। ভোলা-১ আসনে প্রচার চালালেও বাকি দুটি আসনে বিএনপির প্রার্থীরা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন বলে অভিযোগ করেছেন।