বৃষ্টির মধ্যেও ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন ক্রেতারা

সোমবার রাজধানীতে বৃষ্টির মধ্যে টিসিবির পণ্য নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ান মানুষ
ছবি: প্রথম আলো

বিকেল সাড়ে চারটা। আজ সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডির জিগাতলা এলাকায় তখন বৃষ্টির আভাস। দু-এক ফোঁটা করে পড়ছে, সঙ্গে হঠাৎ হঠাৎ বইছে ঝোড়ো হাওয়া, উড়ছে ধুলাবালু। সেখানে টিসিবির পণ্য বিক্রির ট্রাকের পেছনে লাইনে তখনো অর্ধশতাধিক নারী ও পুরুষ দাঁড়িয়ে।

এমন পরিস্থিতিতে অপেক্ষমাণ লোকেরা দ্রুত পণ্য বিক্রির তাগাদা দিচ্ছিলেন। অন্যদিকে বৃষ্টি শুরুর আগেই পণ্য মেপে পলিথিনে ভরার কাজে তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন টিসিবির পরিবেশকের প্রতিনিধিরা।

এর মিনিট বিশেক পরেই শুরু হয় বৃষ্টি আর ঝোড়ো বাতাস। বাতাসের তোপে ট্রাকে টানানো ত্রিপলটাও উড়ে যায় একবার। এমন ঝড়বৃষ্টিতেও দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন লাইন ছেড়ে যাননি। বৃষ্টিতে ভিজেই ট্রাকের পেছনে লাইনে যে যাঁর অবস্থানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে বৃষ্টির মধ্যেই পণ্য বিক্রি করেন পরিবেশকের বিক্রয় প্রতিনিধিরা।

এমন ঘটনা রাজধানীর ধানমন্ডির জিগাতলা এলাকায়। বিকেল পৌনে পাঁচটায় পণ্য বিক্রির শেষ পর্যায়ে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় কেউ কেউ সঙ্গে আনা ছাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়ান। তাতে সঙ্গী হন লাইনে দাঁড়ানো অন্যরা। যাঁদের সঙ্গে ছাতা ছিল না, তাঁরা পণ্য পরিবহনের জন্য আনা ব্যাগ মাথায় দেন। আর যাঁদের কোনোটাই ছিল না, তাঁরা বৃষ্টিতে পুরোপুরি ভিজে যান।

টিসিবির পণ্য পেয়ে বৃষ্টির মধ্যেও হাসি ফুটে ওঠে কারও কারও মুখে
ছবি: প্রথম আলো

বৃষ্টিতে ভিজে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাদের একজন গৃহকর্মী সাহিদা আক্তার। থাকেন রায়েরবাজার এলাকার সিকদার মেডিকেল কলেজ এলাকায়। তাঁর স্বামী মো. ফজলু একজন রিকশাচালক। তাঁদের তিন ছেলেই পড়াশোনা করে। বড় ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে, অন্য দুজন মাদ্রাসায়।

সাহিদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করি। মাসে মাত্র দুই দিন ছুটি পাই। তাই টিসিবি থেকে পণ্য কেনার সুযোগ পাই না। লাইন ছেড়ে গেলে যদি কিনতে না পারি, এ চিন্তা থেকেই বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট হলেও লাইন ছাড়ি নাই।’
সাহিদা যখন লাইনে দাঁড়ান তখন প্রায় দুপুর ১২টা। আর পণ্য কেনার সুযোগ পান বিকেল সোয়া পাঁচটায়। টিসিবির ট্রাক থেকে তিনি দুই লিটার (বোতলজাত) সয়াবিন তেল, ২ কেজি করে চিনি ও ডাল, ৫ কেজি পেঁয়াজ, ৩ কেজি মসুর ডাল এবং ১ কেজি খেজুর কেনেন। এতে তাঁর মোট ৭৯০ টাকা ব্যয় হয়।

বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও পুরুষদের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজারীবাগের বাসিন্দা আজগর আলী। যখন বৃষ্টি শুরু হয়, তখন লাইনে সামনের দিক থেকে তিনি পাঁচজনের পেছনে। আজগর ছেলের পরিবারের সঙ্গে থাকেন। তাঁর ছেলে সাজু মিয়ার রিকশার গ্যারেজ আছে।

আজগর আলী প্রথম আলোকে বলেন, বেলা দেড়টার দিকে খাবার খেয়ে যখন বসে আছেন, তখনই খবর পান ট্রাক এখানে (জিগাতলা) এসেছে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যখন ট্রাকের কাছাকাছি চলে এলেন তখনই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। ভিজতে হলেও তাই আর অন্য কোথাও যাননি। বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে তিনি পণ্য কেনার সুযোগ পান।

আজ জিগাতলা এলাকায় টিসিবির পরিবেশক ছিল মেসার্স হারুন এন্টারপ্রাইজ। পরিবেশকের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, চিনি, ডাল ও ছোলা মেপে পলিথিনে না ভরে নিলে বৃষ্টিতে ভিজে যেত। তাই আগে পলিথিনে ভরার কাজটি করা হয়েছে। এতে কিছুটা সময় বিক্রি বন্ধ রাখতে হয়েছে।
আজ সেখানে ট্রাক যায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। বিক্রি শুরু হয় আধা ঘণ্টা পরে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর বিক্রি কার্যক্রম শেষ হয়।