বিস্ফোরণের শব্দে ভয়ে কেঁদে ওঠে আশপাশের বাড়ির শিশুরা
প্রতিদিনের মতো শনিবারও রাত সাড়ে দশটার দিকে ঘুমাতে যান ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী। মাথার কাছে মোবাইল রেখে মাত্র শুয়েছেন। হঠাৎ বিস্ফোরণে তাঁর ঘর কেঁপে উঠে। প্রথমে ভেবেছিলেন মোবাইল বিস্ফোরণ হয়েছে। তাকিয়ে দেখেন ঘরের দরজা জানালার কাঁচ ও ফ্রেম ভেঙ্গে পড়েছে।
এমন অবস্থায় মোহাম্মদ আলীর পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষ থেকে চলে আসেন এক জায়গায়। কিছুক্ষণ পর জানতে পারেন, ঘর থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এই অবস্থার তৈরি হয়। এতে ঘটনাস্থলের চার কিলোমিটার এলাকা ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠে। এতে আশপাশের এলাকার বাড়িঘর ও মসজিদ-মাদ্রাসার জানালার কাঁচ ভেঙ্গে পড়ে।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক ডিপো নিয়ে তদন্ত চান সংসদ সদস্য
বিষাক্ত ধোঁয়ায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, চোখ দিয়ে ঝরছে পানি
মালিকপক্ষ আসেনি, কী কেমিক্যাল জানতে পারছে না উদ্ধারকারীরা
শনিবার রাত পৌনে এগারোটার দিকে কন্টেইনার ডিপোটিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুর্ঘটনায় চারজন নিহত ও দেড়শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিকদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রয়েছেন।
সরেজমিনে মোহাম্মদ আলীর ঘর ও তার পাশে আবদুল মালেক শাহ জামে মসজিদের জানালার কাঁচ ভাঙ্গা নিচে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত কন্টেইনার ডিপোটির বিপরীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে থাকা ডাকবাংলো মসজিদের জানালার কাচও ভেঙে গেছে।
স্থানীয় সোলেমান হাজারী ও সালাউদ্দিনসহ অন্তত ২০ জন বাসিন্দা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাঁর বলেছেন, বিস্ফোরণের শব্দ শুনে অনেকের ঘরে থাকা শিশুরা ভয়ে কেঁদে ওঠে। এ সময় আশপাশের মসজিদের মাইকে বারবার ঘোষণা দেওয়া হয়—দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় না যাওয়ার জন্য।
রাত একটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে একাধিক আহত ব্যক্তিকে বের করতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে অন্তত শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অপরদিকে যেসব অ্যাম্বুলেন্স আহতদের হাসপাতালে রেখে এসেছে সেগুলো অনবরত সাইরেন বাজিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসছে।
ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন তারা। রাত পৌনে এগারোটার দিকে হঠাৎ বিস্ফোরণে মানুষজন চারিদিকে ছোটাছোটি করতে থাকেন।
রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এই দুর্ঘটনায় তাদের একজন পুলিশ সদস্যের পা বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ নয়জন আহত হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের ৫৩ জন সদস্যসহ মোট দেড়শতাধিক আহত হওয়ার খবর রয়েছে তাঁর কাছে।