বিশ্বে শরণার্থীদের ৭০ শতাংশের উৎস ৫ দেশ: জাতিসংঘ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে
ফাইল ছবি

বিশ্বে শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে থাকা মানুষের ৭০ শতাংশের উৎস পাঁচ দেশ। এই পাঁচ দেশের মধ্যে সিরিয়া থেকে ৬৮ লাখ, ভেনেজুয়েলা থেকে ৪৯ লাখ, আফগানিস্তান থেকে ২৮ লাখ, দক্ষিণ সুদান থেকে ২২ লাখ এবং মিয়ানমার থেকে ১১ লাখ মানুষ বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন। এই হিসাব ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) গত শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০০১ সালের ২০ জুন প্রথম বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালিত হয়। ২০০০ সালের ডিসেম্বরের আগে দিবসটি আফ্রিকা শরণার্থী দিবস হিসেবে পালিত হতো। ১৯৫১ সালে শরণার্থীদের স্বীকৃতির বিষয়ে জাতিসংঘের সনদটি গৃহীত হয়। ফলে এবারের বিশ্ব শরণার্থী দিবস উদ্‌যাপিত হচ্ছে ওই সনদের ৫০ বছর পূর্তিতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আট কোটি ২৪ লাখ। ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর বিশ্বে এসব মানুষের সংখ্যা বেড়েছে চার শতাংশ। আর গত এক দশকে এই সংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণ। বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে শরণার্থীর সংখ্যা দুই কোটি ৭০ লাখ।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে গত বছর আমাদের অধিকাংশ মানুষের চলাচল বাস্তবিক অর্থেই অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এর মধ্যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছে অতিরিক্ত ৩০ লাখ মানুষ।’
শরণার্থী হওয়ার ধারা অব্যাহত থাকায় হতাশা ব্যক্ত করে ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, ‘শরণার্থী হওয়ার ক্রমবর্ধমান ধারা দুর্ভাগ্যজনকভাবে অব্যাহত আছে। তাই আমরা যদি বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা হালনাগাদ করি, তবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের সংখ্যা উল্লিখিত আট কোটি ২৪ লাখের সঙ্গে যুক্ত হবে। তাতে মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।’

ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে হতাশা প্রতিফলিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের যেমন ঝুঁকি রয়েছে তেমনি তাদের ভবিষ্যৎটাও অনিশ্চিত। কারণ নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসন এখন সুদূরপরাহত।
ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে মাত্র ৩৪ হাজার ৪০০ শরণার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলোতে পুনর্বাসিত করা হয় তাদের। এই সংখ্যা এর আগের বছরের এক-তৃতীয়াংশ।

প্রায় চার বছর আগে প্রাণ বাঁচাতে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তি করলেও রাখাইনের পরিবেশের উন্নতিতে মিয়ানমার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় নিজেদের আদি নিবাসে ফিরতে রাজি হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হলেও রোহিঙ্গাদের একজনকেও রাখাইনে ফেরত পাঠানো যায়নি।

আর প্রত্যাবাসনের শেষ উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছিল চীনের মধ্যস্থতায়। চীনের উদ্যোগে দুই দেশ প্রত্যাবাসন নিয়ে এ বছরের জানুয়ারিতে শেষ বারের মতো আলোচনায় বসেছিল। ভার্চুয়াল বৈঠকে এবারের বর্ষার আগে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারির ১ তারিখের সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রত্যাবাসন আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেননা মিয়ানমারের সেনাশাসক জেনারেল মিন অং হ্লাইং সম্প্রতি চীনের এক টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গাদের ফেরত না নেওয়ার বিষয়টি আবারও বলেছেন।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সব সময় মনে করে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যাওয়াটাই সমস্যার একমাত্র সমাধান। এ জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি চীনের উদ্যোগেও আমরা যুক্ত হয়েছি। কিন্তু মিয়ানমারের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে প্রত্যাবাসনের পুরো প্রক্রিয়া থেমে গেছে।’