বিশ্বে এইচআইভির সংক্রমণ কমছে, বাংলাদেশে বাড়ছে
বৈশ্বিকভাবে এইচআইভি সংক্রমণ কমছে। তবে বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর নতুন করে ৮৬৯ জন সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে। আর এক বছরে মারা গেছে ১৪৮ জন।
আজ শনিবার বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই তথ্য দেওয়া হয়। সরকারের জাতীয় এইডস/এসডিটি কর্মসূচি রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশ থেকে এইচআইভি/এইডস নির্মূলের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, বাংলাদেশ তা অবশ্যই অর্জন করতে পারবে। শিরায় মাদকগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মাধ্যমে এই রোগের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মাদক থেকে যুবসমাজকে দূরে রাখতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এই কাজে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে দেশের এইচআইভি/এইডসের সর্বশেষ পরিস্থিতি উপস্থাপন করেন জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক মো. শামিউল ইসলাম। তিনি জানান, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৮৬৯ জন নতুন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। আর এই সময়ে মারা গেছে ১৪৮ জন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৪৫৫ জন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। আর এ পর্যন্ত মারা গেছে ১ হাজার ২২ জন। দেশে এইচআইভি সংক্রমিত মানুষ আছে ১৩ হাজারের মতো। কিন্তু তাদের সবাইকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ইউনিসেফের প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেগবেদার বলেন, সারা বিশ্বে এইচআইভি সংক্রমণের হার কমছে। কিন্তু বাংলাদেশে সংক্রমণ কমছে না। বাড়ছে। তিনি বলেন, এইচআইভি/এইডস নিয়ন্ত্রণে কর্মসূচি চালাতে সরকারের দাতাদের ওপর নির্ভরতা কমিয়েছে। সরকার নিজেই এখন কর্মসূচিতে অর্থায়ন করছে। তবে অর্থ ছাড় করার গতি মন্থর। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সেবার আওতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন।
এইচআইভি আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি পিএল এইচআইভি (পিপল লিভিং উইথ এইচআইভি) নেটওয়ার্কের সভাপতি। হাফিজ উদ্দিন বলেন, এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তিরা সমাজে নানা বৈষম্যের শিকার হয়। তারা অবহেলার শিকার। এদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনার দাবি করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, সরকারের পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব না। আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। নিজেদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে।
এনজিওদের মোর্চা এসটিআই নেটওয়ার্কের সভাপতি আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, দেশে এইচআইভির সংক্রমণ কম এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশে সংক্রমণ হচ্ছে ঊর্ধ্বগতিতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে জাতীয় সংসদের সামনে থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। এতে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও এনজিওকর্মীরা অংশ নেন।