বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ইসির সংলাপ আজ, কারও কারও অনীহা

নির্বাচন কমিশন ভবন
ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অবশ্য সংলাপে যাওয়ার ব্যাপারে আমন্ত্রিত বিশিষ্টজনদের কেউ দ্বিধায় আছেন, কেউ অনীহা দেখিয়েছেন।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন এ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ১৩ মার্চ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে প্রথম সংলাপ করে। সেদিন ৩০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও সংলাপে এসেছিলেন মাত্র ১৩ জন। শিক্ষাবিদদের পর আজ বেলা ১১টায় বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বসছে ইসি।

একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অংশীজনদের মতামত ও পরামর্শ নেওয়ার জন্য ইসি এ সংলাপের আয়োজন করেছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে নিজেদের কর্মপন্থা ঠিক করবে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।

ইসি সূত্র জানায়, আজকের সংলাপে দেশের ৪০ জন বিশিষ্টজনকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ৩৯ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর মধ্যে দুজন দেশের বাইরে আছেন। আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সাবেক আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা।

আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জনের সঙ্গে গতকাল সোমবার কথা বলেছে প্রথম আলো। এর মধ্যে পাঁচজন জানিয়েছেন, তাঁরা আজকের সংলাপে যাচ্ছেন। একজন বিশিষ্ট নাগরিক যাওয়ার বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেননি। আরেকজন বলেছেন, তিনি সংলাপে যেতে না পারলেও নিজের মতামত পাঠিয়ে দেবেন। আর তিনজন বলেছেন, পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান থাকা বা অসুস্থতার কারণে তাঁরা সংলাপে যেতে পারবেন না। বিষয়টি তাঁরা ইসিকেও জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজে কাউকে কাউকে ফোন করে সংলাপে আসার অনুরোধ করেছেন।

অবশ্য ইসির সংলাপে আমন্ত্রিত বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা মনে করছেন, একসঙ্গে অনেক মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সংলাপ করা হলে তা কার্যকর কিছু হবে না। এ রকম পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলোচনা সম্ভব নয়। এটি একটি লোক দেখানো আয়োজন। এর আগের নির্বাচন কমিশনের সংলাপে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে সংলাপে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের অনীহা তৈরি হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সংলাপ হয়তো অর্থবহ কিছু হবে না, কিন্তু তারপরও তাঁরা যাবেন, যাতে কিছু বিষয় ও সত্য কথাগুলো সামনে আসে।

ইসি সূত্র জানায়, সংলাপে আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে এম হাফিজউদ্দিন খান, রাশেদা কে চৌধূরীসহ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আটজন উপদেষ্টার নাম আছে।

এম হাফিজ উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, অসুস্থতার কারণে তিনি সংলাপে যাচ্ছেন না। তবে এ সংলাপে যাওয়ার কোনো অর্থও তিনি দেখেন না। কারণ, সংলাপে ৪০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, এখানে ভালোভাবে কথা বলারও সুযোগ পাওয়া যাবে না।

আমন্ত্রণ পেলেও ঢাকার বাইরে পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান থাকায় আজকের সংলাপে যাচ্ছেন না সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইসির এ সংলাপ বেশি আগেভাগে হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনের আরও প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন ছিল। গত দুটি জাতীয় নির্বাচন পর্যালোচনা করে কী কী সমস্যা, তা চিহ্নিত করা প্রয়োজন ছিল।

আজকের সংলাপে আমন্ত্রিতদের মধ্যে আছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। তাঁরা সংলাপে যাচ্ছেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সংলাপে নিজের কিছু বক্তব্য তুলে ধরবেন। ইসির বক্তব্যও শুনবেন। তিনি বলেন, সিইসি সজ্জন ব্যক্তি। সবার সহায়তা ছাড়া তিনি কিছু করতে পারবেন না। তাই সিইসিকে সহায়তা করা উচিত বলে মনে করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ সংলাপে যেতে না পারলেও নিজের মতামত পাঠিয়ে দেবেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংলাপের এ উদ্যোগ স্বাভাবিক ও সাধারণ। অতীতেও ইসি এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সংলাপে মতামত নিয়ে সেগুলো তারা কতটুকু গ্রহণ করে, সেটা একটা প্রশ্ন। তিনি বলেন, একই সময়ে তাঁর একটি বৈঠক আছে। সময় সমন্বয় করতে পারলে তিনি সংলাপে যাবেন। সংলাপে না গেলেও মতামত পাঠিয়ে দেবেন।

সংলাপে যাওয়ার বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেননি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমস্যা কী এবং সমাধানের প্রক্রিয়া কী, তা সবাই জানেন। নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে ঐকমত্য খুব জরুরি। সংবিধান ও আইনে দেওয়া ক্ষমতার কতটুকু নির্বাচন কমিশন প্রয়োগ করতে পারবে, তা নির্ভর করবে নির্বাচনকালীন সরকারের ওপর।

দায়িত্ব নেওয়ার পর অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করাটা ইসির একধরনের রেওয়াজ। তবে গত কমিশনের আমলে সংলাপে আসা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শগুলো কাগজেই থেকে গেছে। অবশ্য এ কমিশন বলছে, সংলাপে আসা সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা সময় হলে দেখা যাবে।