ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুই বছর আগেই রাজধানীর সব বিলবোর্ড অপসারণ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবে সাতমসজিদ রোডে ধানমন্ডি পুরোনো ২৭ নম্বর সড়কের কোনায় একটি বিলবোর্ড এখনো রয়ে গেছে। কয়েক দিন পরপর তাতে নতুন বিজ্ঞাপন লাগছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই বিলবোর্ডটি রাখা হচ্ছে বলে বিজ্ঞাপনী সংস্থার লোকজনের দাবি।
বিলবোর্ডটি কোন সিটি করপোরেশন এলাকায় পড়েছে, তা নিয়ে দুই করপোরেশন পরস্পরকে ঠেলাঠেলি করছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, ধানমন্ডি এলাকার ওই অংশটুকু দক্ষিণ সিটিতে পড়েছে। আবার দক্ষিণ সিটির (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, বিলবোর্ডটি উত্তর সিটির সীমানার ভেতরে। তবে দুই সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি ও রাজস্ব বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিলবোর্ড থাকা বাড়িটি দুই সিটি করপোরেশনের সীমানায় অবস্থিত। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সীমানা শুরু হয়েছে বিলবোর্ড থাকা ২৭ নম্বর সড়কের (নতুন ১৬ নম্বর সড়ক) ৬০/বি নম্বর বাড়ি থেকে। দক্ষিণ সিটি বাড়িটি থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণের ধারণা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির সীমানা ভাগ হয়েছে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে। আদতে তা নয়। উত্তর সিটির সীমানা শেষ হয়েছে লালমাটিয়া এ ব্লকের মাদার কেয়ার হাসপাতালের গলিতে। দুই সিটির কর্মকর্তাদের মধ্যেও সীমানা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। এই সুযোগটাই নিয়েছেন বিলবোর্ড ব্যবসায়ী। দক্ষিণ সিটির সীমানায় তাই বিলবোর্ডটি উচ্ছেদ করেনি উত্তর সিটি করপোরেশন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লোকজন নিজেদের সীমানায় জানলেও বিলবোর্ডটি উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়নি।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো ২৭ নম্বর সড়কের কোনায় ৬০/বি নম্বর বাড়ির সীমানার ভেতরে একটি বিলবোর্ড। ইউনিপোল (একটি খাম্বার ওপর নির্মিত) বিলবোর্ডটিতে দুটি বিশালাকার বিজ্ঞাপন লাগানো। একটি ব্যাংকের এবং আরেকটি আইসক্রিম কোম্পানির। দুটি বিজ্ঞাপনেই চকচকে নতুন ভাব। এক খাম্বার বিশালাকার বিলবোর্ডটির প্রায় পুরো অংশই ঝুঁকিপূর্ণভাবে সড়কের দিকে বের হয়ে আছে। যেকোনো সময় বিলবোর্ডটি খুলে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সার্ভেয়ার দিয়ে একাধিকবার জরিপ করে দেখা হয়েছে। বিলবোর্ডটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়। তাই এটি উচ্ছেদে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের বিভাজকের বাঁ পাশ দক্ষিণ সিটি এলাকায় আর সড়কের ডান পাশে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়। বিলবোর্ডটি উত্তর সিটির অংশে পড়েছে।’
বিলবোর্ডটি কোন সিটি করপোরেশনের সীমানায় পড়েছে, তা জানতে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হয়। প্রথমে দুই সিটির সম্পত্তি, রাজস্ব ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তারা অন্য সিটির সীমানায় বলে দায় সারেন। পরে ওই এলাকার সীমানা মানচিত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বাড়িটি দক্ষিণ সিটিতে পড়েছে।
বাড়ির মালিকেরা বেশ কয়েক বছর আগে বিলবোর্ডটি বসানোর অনুমতি দিয়েছেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার স্বত্বাধিকারী মো. মারুফকে। মারুফের প্রতিষ্ঠান ভাড়ার বিনিময়ে বিলবোর্ডটিতে নতুন নতুন বিজ্ঞাপন বসাচ্ছে। মো. মারুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনোভাবেই হোক আছে আরকি। অনেক বিলবোর্ড ছিল, সব সিটি করপোরেশন সরায় দিছে। এই একটা বিলবোর্ড দিয়েই টিকে আছি।’
ডিএসসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কিছুদিন আগে এই পদে যোগদান করেছেন। বিষয়টি সম্পর্কে তাঁর ঠিক জানা নেই। খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন হয় ২০১৫ সালের এপ্রিলে। এরপর ঢাকা উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক এবং দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ঢাকাকে বিলবোর্ডমুক্ত করার ঘোষণা দেন। বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের প্রতিবছর সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হতো। ২০১৫ সালের ৩১ জুন মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনই বিলবোর্ডের মেয়াদ নবায়ন করেনি। ফলে রাজধানীর সব বিলবোর্ড আইনগতভাবে অবৈধ হয়ে যায়। জনগণের নিরাপত্তার জন্য ইউনিপোলগুলোকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে সেগুলো আগে অপসারণ করে দুই সিটি করপোরেশন। এরপর সব ধরনের বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়।
প্রায় তিন বছর পেরোলেও বিলবোর্ড নীতিমালা চূড়ান্ত করতে পারেনি ডিএনসিসি। জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিলবোর্ড নীতিমালার খসড়াটি সিটি করপোরেশনের বোর্ড সভায় তোলা হয়েছিল। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কাউন্সিলরদের নিয়ে গঠিত কমিটি নীতিমালা নিয়ে তাদের মতামত দেওয়ার পর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।