বিমানের জন্য সিয়াটলে সাজছে দুটি ড্রিমলাইনার
সবকিছু যেন বাস্তবে রূপ নিল ঝোড়ো গতিতে। হঠাৎ করে আলোচনা। তারপর চলে দর-কষাকষি। দরদাম চূড়ান্ত হওয়ায় এবার দেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুটি নতুন ড্রিমলাইনার বোয়িং ৭৮৭-৯। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে বোয়িং কোম্পানির ফ্যাক্টরিতে এরই প্রস্তুতি চলছে। সিয়াটলে বোয়িং কোম্পানির প্রকৌশলীর কাছ থেকে বিমানের দুটি ড্রিমলাইনারের বেশ কিছু ছবি পাওয়া গেছে।
চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে তোলা এসব ছবিতে দেখা গেছে, একটি ড্রিমলাইনারের রং এখন ধবধবে সাদা। আরেকটি উড়োজাহাজ বোয়িংয়ের প্রতীক যুক্ত করে নীল-গোলাপি রঙে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, দুটি ড্রিমলাইনারের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল থেকে বাংলাদেশের পথে রওনা দেবে ১৯ ডিসেম্বর। দ্বিতীয়টি সেখান থেকে উড়বে ২১ ডিসেম্বর।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী প্রধান মোকাব্বির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নতুন দুটি উড়োজাহাজ কিনে ফেলা হয়েছে। দেশে আসার দিন-তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বড়দিন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ ডিসেম্বর থেকে ছুটি রয়েছে। ড্রিমলাইনারগুলো আনার বিষয়ে দুই পক্ষেরই (বিমান ও বোয়িং কোম্পানি) বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। দেশে আনার বিষয়ে সে অনুযায়ী কাজ চলছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ৪ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে জানান, ডিসেম্বরের শেষের দিকে ড্রিমলাইনার দুটি বিমান বহরে যুক্ত হবে।
বিমান সূত্র জানায়, ১৯ ও ২১ ডিসেম্বর ড্রিমলাইনার দুটি সিয়াটল থেকে ঢাকায় আনার জন্য বেশ কয়েকজন পাইলটকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এর কয়েক দিন আগে বিমানের পাইলটসহ প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন। তবে এর আগে ২০ নভেম্বর থেকে বিমানের সাদা রঙের ওপর লাল-সবুজের নকশার প্রলেপ দেওয়ার কাজ শুরু হবে। এরপর দুটি ড্রিমলাইনারের লেজে বিমানের প্রতীক লাল বৃত্তের মধ্যে বসানো হবে ‘হংস বলাকা’। লোগোসহ নকশা বোয়িং কোম্পানির কাছে পাঠানো হয়েছে। রঙের প্রলেপের কাজ চলবে প্রায় দুই সপ্তাহ। সবশেষে পরীক্ষামূলকভাবে (টেস্ট ফ্লাই) দুটি বিমানকে চালানো হবে।
বিমানের আগের চারটি ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজ সিয়াটল থেকে চালিয়ে দেশে এনেছেন, এমন কয়েকজন পাইলটের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুটি উড়োজাহাজ আগেই টেস্ট ফ্লাই করানো হয়েছে। কারণ এগুলো চীনের একটি বিমান পরিবহন সংস্থার কাছে বিক্রির কথা ছিল। চুক্তি বাতিল হওয়ায় এখন ড্রিমলাইনার দুটি কিনেছে বিমান। তবে রং করার পর কয়েক দফা টেস্ট ফ্লাই করানো হবে। এর অংশ হিসেবে আকাশ ওড়ানোর সময় উড়োজাহাজের দুটি ইঞ্জিনের একটি বন্ধ করা হয়। সেইলর চেক, ল্যান্ডিং গিয়ার চেকসহ জরুরি পরিস্থিতিতে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তার সবই পরীক্ষা করানো হয় টেস্ট ফ্লাইয়ের সময়। সবশেষ টেক-অফ ও ল্যান্ডিং চেক করে বোয়িং কর্তৃপক্ষ তাদের ক্রেতাদের কাছে উড়োজাহাজ হস্তান্তর করে থাকে।
দেশে আসার আগে দুটি ড্রিমলাইনারের নামও দেওয়া হবে। তাদের নামের তালিকাও করা হয়েছে। তালিকাটি বেশ দীর্ঘ। ৪০টি নামের তালিকা করে বিমান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেসব নাম থেকে ড্রিমলাইনারের জন্য দুটি নাম চূড়ান্ত করা হবে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর চতুর্থ ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ ‘রাজহংস’ উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি বোয়িং কেনার আগ্রহ দেখান। পরে জানা যায়, দুটি উড়োজাহাজই বোয়িংয়ের বড় আকৃতির ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার। এরপর মাসখানেক ধরে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে বিমান দর-কষাকষি করে প্রতিটি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার বর্তমান বাজারমূল্যের অর্ধেক দামে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কমে কেনা হচ্ছে। ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজের দৈর্ঘ্য ২০৬ ফুট। এটি ৩০০ যাত্রী বহন করতে পারে। এটি টানা প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার উড়তে পারে।
বিমান বহরে বর্তমানে উড়োজাহাজ রয়েছে ১৬টি। এগুলোর মধ্যে নিজস্ব উড়োজাহাজের সংখ্যা ১০টি। বাকি ৬টি লিজে আনা। নিজস্ব ১০টি উড়োজাহাজের সবই বোয়িং কোম্পানি থেকে কেনা। এর মধ্যে ৪টি ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮, ৪টি ৭৭৭-৩০০ ইআর ও দুটি ৭৩৭-৮০০। নতুন দুটি ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজ কেনা হলে বিমানের উড়োজাহাজ হবে ১৮টি। এ ছাড়া আগামী বছরের প্রথম দিকে কানাডা থেকে কেনা তিনটি ড্যাশ-৮ বিমান বহরে নাম লেখাবে।