হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগার প্রস্তুত করা হয়েছে। আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে চলবে করোনা পরীক্ষা। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিদেশ গমনেচ্ছুদের করোনা পরীক্ষা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে না। কবে নাগাদ এ পরীক্ষা চালু হবে, সে তারিখ অবশ্য জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে অধিদপ্তর জানিয়েছে, যাদের প্রয়োজন হবে, তারা এলেই করোনার পরীক্ষা করা হবে।
বিমানবন্দরে স্থাপিত আরটি–পিসিআর পরীক্ষাগার আজ শনিবার দুপুরে পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক নাসিমা সুলতানা। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিমানবন্দরের পরীক্ষাগার প্রস্তুত। তবে কবে থেকে কাজ শুরু হবে, সে তারিখ ঠিক হয়নি। আজ রাত আটটায় বিমানবন্দরের কর্মকর্তা, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তাদের মধ্যে এক শ জনের নমুনা নিয়ে এ পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে যাত্রী এলেই করোনার পরীক্ষা করা হবে। যাত্রীদের জন্যই এ পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে।’ বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ফি কত—এ বিষয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘পরীক্ষার ফি কত হবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে সেটি দুই হাজার টাকার কম হবে। ফির বিষয়টি নির্ধারণ করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।’
তবে আজ সকালেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মস্থলে ফিরতে ইচ্ছুক প্রবাসী কয়েকজন বিমানবন্দরে আসেন করোনার পরীক্ষার ব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিতে। তাঁদের একজন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বাসিন্দা মো. জহুর আলী। তিনি জানান, তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হবে আগামীকাল। বিমানবন্দরে করোনার পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় তিনবার দুবাই যাওয়ার টিকিট কেটেও তিনি কর্মস্থলে যেতে পারেননি। রোববারের মধ্যেই তাঁকে কর্মস্থলে ফিরতে হবে। তিনি বলেন, ‘আজ বিমানবন্দরে করোনার পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে আমি কাল কাজে ফিরতে পারতাম। এখন বিমানবন্দরে এসে শুনি, তারা বলতে পারছে না কবে নাগাদ পরীক্ষা শুরু হবে। আমি বিপদে পড়ে গেলাম।’
গতকাল শুক্রবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছিলেন, শনিবার থেকে বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য করোনা পরীক্ষা করা যাবে। বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষাগার কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছিলেন।
গত বুধবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরীক্ষামূলকভাবে করোনার পরীক্ষা হয়। অস্থায়ীভাবে স্থাপিত ওই পরীক্ষাগারে ৪৬ যাত্রীর করোনার পরীক্ষা করা হয়। যাত্রা শুরুর ছয় ঘণ্টা আগে পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ সনদ আসায় তাঁরা বুধবার দিবাগত রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান। এর আগে গত মঙ্গলবার প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছিলেন, দু–তিন দিনের মধ্যেই করোনা পরীক্ষাগার স্থাপন করা হবে।
বিমানবন্দরে প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বহুতল কার পার্কিংয়ের ছাদে করোনার পরীক্ষাগার বসবে। পরে আপাতত সিদ্ধান্ত হয় বিমানবন্দরের ভেতরে বসানোর। ১৫ সেপ্টেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার বসাতে সাত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এগুলোর মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) জমা দেয়। এসব এসওপি যাচাই করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানো হয়।
গেল আগস্টে সংযুক্ত আরব আমিরাত সে দেশে যেতে যাত্রার ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে করোনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার শর্ত আরোপ করে। অথচ দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা ছিল না। এতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে যেতে পারছিলেন না প্রবাসীরা। কারও ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।
দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে দ্রুত করোনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার স্থাপনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন প্রবাসীরা। ১৪ সেপ্টেম্বর এ দাবি নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নিচে প্রবাসীরা প্রতিবাদ করেন।
৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা শনাক্তে পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে নির্দেশের ১৬ দিন পর ২২ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরে পরীক্ষামূলকভাবে করোনার পরীক্ষা করিয়ে ৪৬ যাত্রীকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানো হয়।