বিদায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে এবার ৫০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদের সাবেক সভাপতি ও সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আওয়াল কবির।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে তিনি পাবনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। আদালতের বিচারক মো. সাইফুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে সমন জারি করেছেন।

মামলার এজাহারে শিক্ষক আওয়াল কবির দাবি করেছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি, প্রক্টরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন। উপাচার্য এম রোস্তম আলীর বিভিন্ন অনিয়ম–দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। তাঁকে (আওয়াল কবির) বিভিন্নভাবে হয়রানি ও অপদস্ত করেন। ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর রিজেন্ট বোর্ডের ৫৩তম সভায় উপাচার্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু তিনি রিজেন্ট বোর্ডের সভায় অংশগ্রহণের জন্য উপাচার্যের কার্যালয়ে গেলে তাঁকে সভায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেন।

আরও পড়ুন
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০তম রিজেন্ট বোর্ডের সভা বাতিল করে চলে যেতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম রোস্তম আলীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। স্থানীয় সাংসদের হস্তক্ষেপে সভার নতুন তারিখ ঘোষণা করে পুলিশ ও প্রশাসনের পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন উপাচার্য
ফাইল ছবি

শিক্ষক আওয়াল কবিরের দাবি, উপাচার্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদন্ত কমিটির নামে তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন। দীর্ঘ সময় তদন্ত কমিটি ঝুলিয়ে রেখে প্রতিবেদন না দিয়ে উপাচার্য মেয়াদ শেষের আগেই ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এতে তাঁর (আওয়াল কবির) সামাজিক, ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক সম্মানহানি হয়েছে এবং তিনি সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এতে তাঁর ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাই তিনি মামলাটি করেছেন।

আওয়াল কবির একসময় ছাত্রলীগ করতেন। ২০১০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১৪ সালে পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ২০১৬ সালে প্রক্টরের দায়িত্ব পান। ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যেই শিক্ষক রাজনীতিতে জড়ান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্ন্তয শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৭–১৮ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়াল কবিরকে নিয়ে ২০১৭ সালে ‘অনিয়মে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকই এখন হর্তাকর্তা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন

মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে উপাচার্য এম রোস্তম আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

ঘটনার এত পরে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক আওয়াল কবির প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্য এম রোস্তম আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বপালনকালে ব্যাপকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তাঁর অনিয়ম–দুর্নীতির বিষয়ে কেউ কথা বলতে গেলেই বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন এবং ষড়যন্ত্র করে হয়রানি করেছেন। তিনি দায়িত্বে থাকাকালে তাঁর বিপক্ষে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মামলাটি করা হলো।

আরও পড়ুন
১৭ দফা দাবিতে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা
ফাইল ছবি

প্রসঙ্গত, ৬ মার্চ এম রোস্তম আলীর মেয়াদ শেষ হয়। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডের ৬০তম সভা আহ্বান করেন। সভায় ৬১টি আলোচ্য সূচির মধ্যে ৪২টি ছিল নিয়োগসংক্রান্ত। এতে ১০২ জনের নিয়োগপ্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতায় তিনি সভা স্থগিত করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন সভায় পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা শিক্ষকেরা। তাঁরা উপাচার্যকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। প্রায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য ও পাবনা-১ আসনের সাংসদ শামসুল হক টুকুর সমঝোতায় উপাচার্য নিজেই ২৪ ফেব্রুয়ারি রিজেন্ট বোর্ডের সভা আহ্বান করে ক্যাম্পাস ছাড়েন। আগের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি ক্যাম্পাসে আসেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এর দুই দিন পর চুপিসারে ক্যাম্পাস ছাড়েন উপাচার্য। এতে আবার ক্ষুব্ধ হন পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা কর্মকর্তারা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৭ দফা দাবি তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা পরিষদ রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সে তালা ঝুলছেই।