বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে অল্প সিট পেয়েছে, সেই অভিমানে তারা পার্লামেন্টে আসছে না। আমার মনে হয় রাজনৈতিকভাবে এটা ভুল সিদ্ধান্ত।’
আজ বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রশ্নোত্তরের আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে চারটায় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সম্মিলিতভাবে দেশ গড়ার চেষ্টা করছি। এ জন্য নির্বাচনের আগে সব দলকে ডেকেছিলাম। তাদের সঙ্গে সুন্দর পরিবেশে বৈঠক করেছি এবং নির্বাচন করার আমন্ত্রণ করেছি। ১০ বছরের উন্নয়নের সুফল বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে বলে বহু আগে থেকেই তারা নৌকায় ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। জনগণ সেই ভোট দিয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে অল্প সিট পেয়েছে, সেই অভিমানে তারা পার্লামেন্টে আসছে না। আমার মনে হয় রাজনৈতিকভাবে এটা ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ ভোটের মালিক জনগণ, তারা যাকে খুশি তাদের ভোট দেবেন এবং সেইভাবেই তারা ভোট দিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তাঁরা সংসদে এলে কথা বলার সুযোগ পাবেন। এই সুযোগ কেবল সংসদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। কারণ এখন সংসদের কার্যক্রম সরাসরি মিডিয়াতে যায়। যার মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পারেন। এই সুযোগটা তাঁরা কেন হারাচ্ছেন, তা আমি জানি না। তবে আহ্বান থাকবে, যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা সবাই সংসদে আসবেন, বসবেন এবং কথা বলবেন।’
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশ আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশকে বিশ্ব সম্প্রদায় এখন সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। যত দিন বেঁচে থাকব, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাব। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব।’
আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখনই যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে ভোলার কেউ না কেউ মন্ত্রী ছিলেন এবং ভোলার উন্নয়ন হয়েছে। মাননীয় সংসদ সদস্য যে এলাকার কথা বলছেন ওখানে কিন্তু ‘জ্যাকব টাওয়ার’ হয়েছে। আমার মনে হয় সেই জ্যাকব টাওয়ার দেখতেই বহু লোক যান। আমার মনে হয় এটা নিয়েই ওনার সন্তুষ্ট থাকা উচিত।’
নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেট দ্রুত প্রকাশ হবে
এদিকে বাসসের খবরে বলা হয়েছে, আজ সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদের সুপারিশমালা পরীক্ষা করে দ্রুত গেজেট প্রকাশ করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে নিয়মিতভাবে প্রতি পাঁচ বছর পরপর ওয়েজ বোর্ড গঠন করছে। নবম ওয়েজ বোর্ড সব সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমকর্মীর জন্য ৪৫ ভাগ মহার্ঘ ভাতা প্রদানের সুপারিশ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসচ্ছল, অসুস্থ ও দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিকদের অনুকূলে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত এ ট্রাস্ট থেকে মোট ১ হাজার ৩৯৬ জনকে মোট ১০ কোটি ৭ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ তহবিলে ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিল থেকে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ডে সিড মানি হিসেবে ২০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এ নিয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ডে বর্তমানে মোট ৩৫ কোটি টাকা সিড মানি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহের অধিকার সুরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। ইতিমধ্যে সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের আলোকে দেশে গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে সাংবাদিকদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪৪টি টেলিভিশন লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৩টি সম্প্রচার করছে। ২৮টি এফএম রেডিওর লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি এফএম রেডিও সম্প্রচার করছে। এলাকা ও অঞ্চলভিত্তিক ৩২টি কমিউনিটি রেডিওর লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে, এর মধ্যে ১৭টি সম্প্রচারে রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে সারা দেশে প্রকাশিত মোট দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ১ হাজার ২৪৮টি, যার মধ্যে ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকার সংখ্যা ৫০২টি ও আঞ্চলিক পত্রিকার সংখ্যা ৭৪৬টি। সারা দেশে সাপ্তাহিক পত্রিকার সংখ্যা ১ হাজার ১৯২টি, মাসিক পত্রিকার সংখ্যা ৪১৪টি ও অন্যান্য পত্রিকার সংখ্যা ৪১টি। এ ছাড়া ২ হাজার ২১৭টি অনলাইন মিডিয়া রয়েছে, যার মধ্যে অনলাইন পত্রিকা ১ হাজার ৮৭৪টি, ইন্টারনেট টেলিভিশন ২৫৭টি, অনলাইন রেডিও ৪৫টি ও ই-পেপার ৪১টি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রচার আইন, ২০১৮-এর খসড়া তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত অক্টোবরে খসড়া আইনটি নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে। এটি গত ৪ নভেম্বরে ভেটিংয়ের জন্য লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ এর অনুচ্ছেদ ৩.২.২ থেকে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য পরিবেশনের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত অন্যান্য আইনেও মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের বিরুদ্ধে বিধি-নিষেধ রয়েছে। মিথ্যা সংবাদ প্রচার করলে টিভি চ্যানেলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরি সুরক্ষার জন্য ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরি ও শর্তাবলি) আইন’ প্রণয়ন করা হয়েছে। গত বছরের ১৫ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।