বায়োস্কোপে ঘোরে জীবিকা
আবদুল জলিল মণ্ডল। বায়োস্কোপ দেখান সেই ১২ বছর বয়স থেকে। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৪০ বছর। এখনো রঙিন বাক্সটি নিয়ে ছুটেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সম্প্রতি তাঁকে দেখা গেল গাজীপুরের একটি মেলায়।
আবদুল জলিলের মাথায় গামছা, হাতে ডুগডুগি। মানুষকে বিনোদন দেন রঙে-ঢঙে। তবে বর্তমানে হাতে হাতে মুঠোফোন আর ইন্টারনেটের কারণে বায়োস্কোপের কদর অনেক কমে গেছে। আবদুল জলিল বলেন, ‘আগে ডুগডুগি বাড়ি দিলেই ছেলেমেয়েরা ছুটে আসত। চাল, ডাল, আলু, সবজি দিয়া খেলা দেইখা যাইত। কিন্তু এখন আর মানুষের মাঝে সেই আগ্রহ নাই। অনেকে বায়োস্কোপ কী, সেটাই বোঝে না।’
৩০ মার্চ বিকেলে গাজীপুরের হাজী জমিরউদ্দিন বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত একটি মেলায় আবদুল জলিলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। বাবার কাছ থেকে বায়োস্কোপ দেখানোর কৌশল রপ্ত করেন তিনি। এখন এটাই তাঁর পেশা। তখন তাঁর মতো অনেকেরই প্রধান পেশা ছিল ছিল বায়োস্কোপ দেখানো। কিন্তু বর্তমানে বায়োস্কোপের চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকেই সরে গেছেন এই পেশা থেকে। আবদুল জলিলের কথায়, ‘আমি সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজধানীতে বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার খেলা (বায়োস্কোপ) দেখাইছি। কিন্তু কোথাও অন্য কোনো বায়োস্কোপওয়ালাদের দেখি নাই।’ তাঁর মতে, বিনোদনের সহজলভ্যতার কারণেই দিন দিন বায়োস্কোপের বিলুপ্তি ঘটছে।
অনেকে বায়োস্কোপের নাম শুনেছে গানে, নয়তো পড়েছে বইয়ে। তাই বিদ্যালয়ের মাঠে বায়োস্কোপ দেখে শিশুরা ছিল উচ্ছ্বসিত। তাদের সঙ্গে বড়রাও দেখেছে বায়োস্কোপ। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী শরিফা আক্তার বলে, ‘বাক্সের (বায়োস্কোপ) ভেতরের ছবিগুলো অনেক বড় বড় দেখা যায়। মনে হয় একদম চোখের সামনে। তাই খুব ভালো লাগছে।’ একাদশ শ্রেণির ছাত্র ফারদিন আহমেদ বায়োস্কোপ দেখার সময় বন্ধুদের দিয়ে ছবি তুলছিল। ফারদিন বলে, ‘শুধু টিভিতেই বায়োস্কোপ দেখছি। তাই স্মৃতি হিসেবে ছবি তুলে রাখলাম।’
আবদুল জলিল জানান, বায়োস্কোপের সামনে ও দুই পাশে চোঙার মতো ছয়টি মুখ আছে। প্রতিটি মুখে লাগানো উত্তল লেন্স। বাক্সের ভেতর এক পাশে কাপড়ে লাগানো নানা ধরনের ছবি। আর কাপড় প্যাঁচানো দুইটা কাঠিতে। এর মধ্যে কাঠির ওপরের মাথায় বাক্সের বাইরে লাগানো থাকে একটি হ্যান্ডেল (হাতল) বা চাবি। এই হ্যান্ডেল ঘোরালে ছবিসহ কাপড়টা এক পাশ থেকে অন্য পাশে প্যাঁচাতে থাকে। তখন চোঙায় চোখ লাগালে দেখা যায় ছবিগুলো। লেন্স থাকায় ছবিগুলো দেখা যায় বড় ও স্পষ্ট। ছবির সঙ্গে সঙ্গে খঞ্জনি বাজিয়ে ছন্দ মিলিয়ে দেওয়া হয় ধারাবর্ণনা। এ সময় একবার বাঁ থেকে ডানে, আবার ডান থেকে বাঁয়ে ঘোরানো হয়। এর মধ্যে কোনো ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে ঠিক করেন নিজেই। তিনি জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে ছবিতে। নতুন যোগ হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বর্তমান সময়ের নায়ক-নায়িকাসহ বিভিন্ন ধরনের মনোরম ছবি। তবে এখনো আছে আগের মক্কা-মদিনা, তাজমহল, লালবাগ।