করোনায় নতুন শর্ত
বাড়তি খরচের চাপে সৌদিপ্রবাসীরা
কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেলভাড়া ও করোনা পরীক্ষার ফি বাবদ ৫৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগছে প্রবাসী কর্মীদের।
সৌদি সরকারের নতুন বিধিনিষেধের কারণে নতুন করে বাড়তি খরচের চাপে পড়েছেন প্রবাসী কর্মীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়া নিয়েও কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
রিক্রুটিং এজেন্সি ও উড়োজাহাজ সংস্থার কর্মকর্তা এবং প্রবাসীরা জানিয়েছেন, ২০ মে থেকে কিছু শর্ত আরোপ করেছে সৌদি আরব সরকার। এতে বলা হয়েছে, করোনার পূর্ণ ডোজ টিকা না নেওয়া থাকলে ৭ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এ ছাড়া হোটেলে প্রবেশের আগে এবং কোয়ারেন্টিন শেষে নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। এর জন্য ৫৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হবে কর্মীদের।
শরীয়তপুরের তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এজেন্সি তাঁর কাছে নতুন করে ৭০ হাজার টাকা দাবি করেছে। এখন তাঁর পক্ষে এই টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।
রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকেরা বলছেন, টিকিটের দাম এমনিতেই বাড়তি। সৌদি আরবে গিয়ে হোটেলভাড়া ও করোনা পরীক্ষার টাকা দিতে হবে প্রবাসী কর্মীকে। সৌদি নিয়োগকর্তারা (কফিল) কোয়ারেন্টিনের খরচ দিতে রাজি হচ্ছেন না। সব মিলে অভিবাসন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। সৌদি যেতে একজন কর্মীকে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করতে হয়। হোটেলভাড়ার জন্য এটি চার লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আবার কম বেতনের চাকরিতে দুই লাখ টাকা খরচ করেও যান অনেক কর্মী। তাঁদের প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হবে।
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি টিপু সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার চাইলে কল্যাণ তহবিল থেকে প্রবাসীদের সহায়তা দিতে পারে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রবাসীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে।
■ টিকা দেওয়া না থাকলে ৭ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন। ■ সৌদিতে কোয়ারেন্টিনের আগে ও পরে করতে হবে করোনা পরীক্ষা।
এদিকে সৌদি সরকারের নতুন বিধিনিষেধের কারণে ২০ মে থেকে সৌদি আরবে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ বিমান। বাংলাদেশ বিমানের জনসংযোগ বিভাগ বলছে, কোয়ারেন্টিন প্যাকেজ নিশ্চিত করা সাপেক্ষে ২৯ মে থেকে সৌদি আরবে আবার ফ্লাইট চালু হবে। কোয়ারেন্টিনের জন্য বাড়তি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাগছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
ফ্লাইট অনিয়মিত হয়ে পড়ায় বাংলাদেশে আটকা পড়েছেন কয়েক হাজার কর্মী। সৌদি যেতে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো নতুন প্যাকেজ দিয়েছে। সৌদি এয়ারলাইনসে (সাউদিয়া) টিকিটসহ পুরো প্যাকেজ পড়ছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ওমানের উড়োজাহাজ সংস্থা সালাম এয়ারে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর শ্রীলঙ্কা এয়ার দিচ্ছে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার প্যাকেজ। তবে বিমান ও এমিরেটসের কোনো প্যাকেজ এখনো ঘোষণা হয়নি। যাঁদের আগে টিকিট নেওয়া আছে, তাঁদের শুধু কোয়ারেন্টিনের খরচের টাকা দিতে হচ্ছে।
জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সংশ্লিষ্ট দেশের বিধিনিষেধ মানতেই হবে। সহায়তার বিষয়টি নিয়ে ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের পরবর্তী সভায় আলোচনার জন্য প্রস্তাব করা হবে বলে জানান তিনি।
‘আমরা সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশি’ নামের ফেসবুক গ্রুপে প্রবাসী মিজানুর রহমান লিখেছেন, দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিলেও শেষ ডোজের পর ১৪ দিন পার না হলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক। এ জন্য রিয়াদে ৬৬ হাজার, জেদ্দায় ৫৪ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাগছে।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ব্যয় কর্মীদের ওপর না চাপিয়ে নিয়োগকর্তা, গন্তব্য দেশ বা দুই দেশ মিলে এ বাড়তি খরচ মেটাতে সমঝোতায় আসতে হবে।