বালু উত্তোলনে হাইকোর্টে রিট করে বিফল সেই সেলিম খান

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার পাঁচটি মৌজায় মেঘনা নদী থেকে ২৮ লাখ ৪০ হাজার কিউবিক মিটার বালু উত্তোলনে হাইকোর্টে রিট করে বিফল হয়েছেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান। নিজ খরচে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান ও হাইড্রোগ্রাফিক ডিভিশনের পরিচালকের প্রতি নির্দেশনা দিতে সেলিম খানের করা রিটটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রিটটি সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন।

পাঁচ মৌজায় হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ নিয়ে গত মাসের শেষ দিকে ওই রিটটি করেন সেলিম খান। হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের মাধ্যমে নদীর তলদেশে কোথায় কত দূরত্বে মাটি রয়েছে, তা আধুনিক পদ্ধতিতে চিহ্নিত করা বা এর মানচিত্র তৈরি করা হয়। ডুবোচর কাটতে হলে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে হয়।

শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার ২১টি মৌজায় অবস্থিত মেঘনার ডুবোচর থেকে ৮৬ দশমিক ৩০ কিউবিক মিটার (৩০ কোটি ৪৮ লাখ ঘনফুট) বালু উত্তোলনে অনুমতি চেয়ে এর আগে তিনি রিট করেন। ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট তাঁকে বালু উত্তোলনে অনুমতি দিতে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। গত ৪ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন।

এসব তথ্য গোপন করে রিটটি করা হয়। এ ক্ষেত্রে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ৯–এর বিধিবিধানও অনুসরণ করা হয়নি। ২১টির মৌজার মধ্যে ওই ৪টি মৌজাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। একই বিষয় নিয়ে চলতি বছরেই আরেকটি রিট করন, তাতে অপর মৌজাটি উল্লেখ রয়েছে। রাষ্ট্র কি এতই গরিব হয়ে গেছে যে উনার (সেলিম খান) টাকায় হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে হবে। রিটটি সরাসরি খারিজের আরজি জানান তিনি।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে সেলিম খানের পক্ষে আইনজীবী জাফর আলীম খান শুনানিতে বলেন, তথ্য গোপন করা হয়েছে বলা হচ্ছে, যা সঠিক নয়। আগের রিট ও এই রিটের বিষয়বস্তু এক নয়। একটি মৌজায় একাধিক হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ হতে পারে। মৌজায় একাধিক দাগ থাকে। ২০১০ ও ২০১৭ সালে দুটি রিটে পক্ষে আদেশ হয়। আদালত বলেন, একটি রিট খারিজ (রুল ডিসচার্জ) হয়েছে, অন্যটিতে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে দেখা যাচ্ছে। বালু উত্তোলনের অনুমতি কী দিয়েছে? যে দুটি রায়ের কথা বলছেন, তাতে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে—এমন বিষয় দেখা যাচ্ছে না।

একপর্যায়ে জাফর আলীম খান বলেন, হাইকোর্টের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরকার আপিল বিভাগে আবেদন করে। দুটি আবেদনই খারিজ হয়েছে। সার্ভের জন্য টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। রয়্যালটি মানিও দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে গত ২২ এপ্রিল রিপ্রেজেন্টশন দেওয়া হলেও এর জবাব আসেনি। শুনানি নিয়ে আদালত রিট সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন।

আদেশের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তথ্য গোপন করে ওই রিটট করা হয়েছে বলে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। রিট খারিজ হওয়ায় বালু উত্তোলনে সেলিম খানের যে আইনগত সুযোগ নেই, তা আবারও প্রতিষ্ঠিত হলো। তবে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে বলে জানান সেলিম খানের আইনজীবী জাফর আলীম খান।

এর আগে ২ মার্চ মেঘনায় বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তীর ভেঙে পড়া ও পরিবেশঝুঁকি নিয়ে প্রথম আলোয় ‘পদ্মা–মেঘনার সর্বনাশ: “বালুখেকো” চেয়ারম্যান তিনি’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এতে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা বলছেন, মেঘনায় নির্বিচার বালু তোলার কারণে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থান দেবে গেছে। ভেঙে পড়ছে নদীর তীরও।

জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজননও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে নদী থেকে তোলা বালু বিক্রি করে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের আয় হচ্ছে মাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকা।