বানরুটি, বিস্কুটের দামও বাড়তি, বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ
‘বাজারে স্বস্তি নেই। প্রায় সবকিছুর দামই বাড়তি। আটা, ময়দা, চিনি, গুঁড়া দুধ কোনোটিতেই হাত দেওয়া যাচ্ছে না। আগে ৫ টাকায় একটা বানরুটি পাওয়া যেত। এখন সাত থেকে আট টাকা। গরিব মানুষ কীভাবে চলবে?’
চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ মোড়ের এক টংদোকানে চা খেতে খেতে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন রিকশাচালক সালেহ আহমদ। ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল চারটা। আজ শুক্রবার। রুটি, বিস্কুট ও ঝাল খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় মানুষ ছিল হাতে গোনা। তাই সালেহ আহমদও তেমন ভাড়া পাননি। রিকশা নিয়ে বের হন দুপুর ১২টার দিকে। বিকেল চারটা পর্যন্ত সালেহ আহমদের আয় হয় ২৭৫ টাকা। সালেহ আহমদ বলেন, বানরুটির আকার ছোট হয়েছে। দামও বেড়েছে। এখন একটা বানরুটি খেলে পেট ভরে না। আবার বেশি খাওয়ার সুযোগও নেই।
সালেহ আহমদ (৩৫) মাস তিনেক আগে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম এসেছেন। জাফলংয়ে তাঁর বাড়ি। তবে জায়গাজমি কিছুই নেই। বন্দরনগরে আসার আগে সিলেটে রিকশা চালিয়েছেন। একটু বাড়তি আয়ের আশায় চলে আসেন চট্টগ্রামে। এখন পরিবার নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পড়েছেন বিপাকে।
সালেহ আহমদ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টংদোকানে পাঁচ থেকে ছয়বার নাশতা করতেন। একবারে দুটি বানরুটি আর এক কাপ চায়ে খরচ পড়ত ১৬ টাকা। এখন ২৩ টাকা। তিনি বলেন, এখন দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে তিনবারের বেশি নাশতা করা হয় না। টাকা বাঁচাতে খাওয়া কমিয়েছেন তিনি।
অবশ্য শুধু সালেহ আহমদ নন, বেকারি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁর মতো বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। কেউ খাওয়া কমিয়েছেন। আবার কেউ যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে পুষিয়ে নিচ্ছেন। এই যেমন মোহাম্মদ সোহেল। তিনিও রিকশাচালক। গতকাল বৃহস্পতিবার মুরাদপুরের আরেকটি টংদোকানে রিকশা রেখে চা খাচ্ছিলেন। এক ফাঁকে প্রথম আলোকে বলেন, খাবারের দাম বাড়লে রিকশা ভাড়াও বেশি নেন। তবে নির্মাণশ্রমিক ফয়জুল মিয়ার সেই সুযোগ নেই। তিনি এক দিন কাজ করে আগে পেতেন ৬০০ টাকা, এখনো তা–ই পান।
পাঁচলাইশ এলাকার একটি টংদোকানের মালিক মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানালেন, তাঁর কাছে বিস্কুট, বানরুটি, কেকসহ নানা বেকারি পণ্য রয়েছে। প্রায় সব খাবারের দাম এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে। আগে একটি বানরুটি বিক্রি হতো পাঁচ টাকায়। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে সাত টাকায়। আগে যে বিস্কুট দুই টাকা ছিল এখন তা তিন টাকা।
বানরুটির আকার ছোট হয়েছে। দামও বেড়েছে। এখন একটা বানরুটি খেলে পেট ভরে না। আবার বেশি খাওয়ার সুযোগও নেই।
নগরের টংদোকানগুলোতে বিভিন্ন বেকারি পণ্য সরবরাহ করে এ রকম শতাধিক বেকারি নিয়ে ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বেকারি মালিক সমিতি গড়ে ওঠে। সমিতির প্রচার সম্পাদক আশিস চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আগে ১০০ গ্রামের ছোট পাউরুটির প্যাকেট বিক্রি হতো ১০ টাকায়। এখন ১৫ টাকা। শুধু পাউরুটি নয়, দাম বেড়েছে ডেনিস, বেলা বিস্কুট, রোজ বিস্কুট, টোস্ট বিস্কুট, কুকিজ ও বিভিন্ন ধরনের কেকেরও। কোনোটিতে প্রতি প্যাকেটে তিন টাকা, কোনোটি বেড়েছে পাঁচ টাকা।
আশিস জানান, এক সপ্তাহ আগেও ৫০ কেজি ওজনের ময়দার বস্তার দাম পড়ত ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। এখন দাম পড়ছে ২ হাজার ৫০০ টাকারও ওপরে। একইভাবে চিনি, গুঁড়া দুধ, আটাসহ বেকারির সব কাঁচামালের দাম বেড়েছে।
আজ ১০টি টংদোকান ঘুরে আশিস চৌধুরীর কথার সত্যতা পাওয়া গেল। সব কটি দোকানেই আটা-ময়দা দিয়ে তৈরি বেকারি পণ্যের দাম বেড়েছে। এসব পণ্যের আকারও ছোট হয়েছে।
অন্যদিকে নগরের হাসিনা বেকারি, প্রবাসী বেকারি ও হাইওয়ে সুইটসে সব পণ্যের দাম এখনো বাড়েনি। তবে বানরুটি, পাউরুটি ও কেকের দাম বেড়েছে। হাইওয়ে সুইটস ২ নম্বর গেট শাখার তত্ত্বাবধায়ক পঙ্কজ দাশ বলেন, কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে মিষ্টির দাম বেড়েছে ২০ টাকার মতো। এ ছাড়া ঝাল নাশতা, যেমন শিঙাড়া, সমুচা, সবজি প্যাটিস, সবজি রোল, চিকেন বান ইত্যাদির দাম দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে।