বাজারে সরু হচ্ছে সড়ক, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

মহাসড়কের পাশে বাজার ও যানবাহনের স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় দূরপাল্লার যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও প্রাণহানির ঘটনাও বাড়ছে।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠছে একের পর এক বাজার। এসব বাজারে মানুষের ভিড় এবং বিভিন্ন যানবাহনের স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় দূরপাল্লার যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও প্রাণহানির ঘটনাও বাড়ছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, গত মে মাসে বরিশালে ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৯ মে ভোরে মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল এলাকায় বাস দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত হন।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বলছে, ফরিদপুরের ভাঙা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ২০৫ কিলোমিটার। মাত্র ২৪ ফুট চওড়া এই মহাসড়ক ঢাকা থেকে বরিশাল বিভাগের ১০ জেলার যানবাহন সামাল দিতে এখনই হিমশিম অবস্থা। পদ্মা সেতু চালুর পর যান চলাচল বাড়বে কয়েক গুণ। মহাসড়কের পাশে বাজার গড়ে ওঠায় যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়বে।

মহাসড়কের বরিশাল থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত সওজের বরিশাল অংশে পড়েছে। সওজ সূত্র বলছে, গত কয়েক বছরে কয়েক দফায় সম্প্রসারণ করা হলেও বাজার এলাকায় মহাসড়ক সরু হয়ে পড়েছে।

সওজ সূত্র জানায়, বরিশালের বাকেরগঞ্জ থেকে ফরিদপুরের ভুরঘাটা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই অংশে মহাসড়ক ঘেঁষে ২৪টি বাজার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বরিশাল থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত মহাসড়কের ৪৬ কিলোমিটার এলাকায় ১৮টি ও বরিশাল নগরের জিরো পয়েন্ট থেকে বাকেরগঞ্জ পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার অংশে ৬টি বাজার রয়েছে।

বরিশাল অংশের বাজারের মধ্যে চৌমাথা, কাশীপুর, রেইনট্রিতলা, গড়িয়ারপাড়, ছয়মাইল, সাতমাইল, রহমতপুর, জয়শ্রী, লাকুদিয়া, ইচলাদি, শানেওয়ার, বামরাইল, বাটাজোর, মাহিলারা, টরকি, বার্থী, গৌরনদী ও ভুরঘাটা বাজার অন্যতম। এসব বাজারে মহাসড়কের পাশে ভাসমান বাজার বসে। প্রতিটি বাজারেই রয়েছে বাস, রিকশা ও অটো টেম্পোর স্ট্যান্ড। এসব বাজারে ঢোকার মুখে বাসস্ট্যান্ডে অসংখ্য রিকশা, ব্যাটারিচালিত ভ্যান দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়।

এতে দূরপাল্লার বাস আটকা পড়ছে। বরিশালের জিরো পয়েন্ট থেকে বাকেরগঞ্জ পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার মহাসড়কে ছয়টি স্থায়ী ও তিন থেকে পাঁচটি অস্থায়ী (সাপ্তাহিক) বাজার বসে। এর মধ্যে নগরের রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, বুড়ির মাজার, বোয়ালিয়া বাজার, বাকেরগঞ্জ অন্যতম।

বাকেরগঞ্জের বোয়ালিয়া বাজার এলাকার তাইজুল বলেন, মহাসড়কের পাশে সপ্তাহে দুই দিন বাজার বসে। এখান থেকে একটি চক্র মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা নিচ্ছে।

গৌরনদীর মাহিলারায় মহাসড়কের পাশে সকাল থেকে ভাসমান বাজার বসে রাত পর্যন্ত চলে। চট বিছিয়ে অথবা সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে মাছ-সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। বাজারের মহাসড়কের দুই পাশে ২-৩ ফুট দূরত্বে অন্তত ২০০ স্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে।

একই অবস্থা গৌরনদী বার্থী বাজার এলাকায়। মহাসড়কের পাশে বসে ভাসমান বাজার। এতে মাছ-সবজিসহ নানা পণ্য নিয়ে বসেন দোকানিরা। এসব দোকানের সামনে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে। এখানে কালীমন্দির এলাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

মহাসড়কের গড়িয়ারপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়ক ঘেঁষে ২০-২৫টি বাসের কাউন্টার। এতে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশে অটো রিকশার স্ট্যান্ড থাকায় দূরপাল্লার যান আটকে যাচ্ছে, ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
গৌরনদী এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী দাবি করেন, ‘আমরা অবৈধভাবে বসিনি। বছর বছর দুই পাশ সম্প্রসারণ করা হয় বলে আমরা এখন মহাসড়কের কাছে চলে এসেছি। এগুলো অবৈধ স্থাপনা নয়।’

বরিশাল নগরের সিঅ্যান্ডবি সড়কে চৌমাথা বাজার। সড়কের ওপর অটোরিকশার স্ট্যান্ড। সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো হচ্ছে। ক্রেতারা সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে বাজারে কেনাকাটা করেন। ফলে এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

বাসচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কে বাস চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বাজার আর অবৈধ যান চলাচলের কারণে মহাসড়কে আমরা ঠিকমতো গাড়ি চালাতে পারি না। এসব বাজার নির্দিষ্ট স্থানে সরিয়ে নিলে সড়ক দুর্ঘটনা কমত।
ট্রাকচালক সুমন মিয়া বলেন, ‘আমি প্রায়ই উত্তরাঞ্চল থেকে মালামাল নিয়ে বরিশালে আসি। রাস্তার পাশে বাজারের শেষ নেই। এতে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।’

জানতে চাইলে বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসড়কের পাশের বাজার অপসারণে আমরা কাজ করছি। এসব বাজার উচ্ছেদের জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের সহযোগিতায় আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করব।’

জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে বাজার অপসারণ করা হচ্ছে। এই কাজের দায়িত্ব সওজের। তারা আমাদের বাজারের তালিকা দিলে আমরা তাদের কাজে সহযোগিতা করব।’