বরিশাল থেকে পদ্মা সেতু হয়ে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় ঢাকায়
বরিশাল শহর থেকে বাসে করে রওনা দিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকায় এসেছেন ব্যবসায়ী মো. মোজাম্মেল হোসেন। আজ রোববার সকালে বিআরটিসির বাসে করে ঢাকায় আসেন তিনি। সময় বাঁচিয়ে ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই ঢাকায় আসতে পেরে মোজাম্মেল দারুণ উচ্ছ্বসিত। পরে তিনি তাঁর উচ্ছ্বাসের কথা প্রথম আলোকে জানান।
মোজাম্মেলের বাড়ি বরিশাল শহরের রূপাতলী এলাকায়। সেখানে তাঁর পরিবার থাকে। ব্যবসার কারণে তাঁকে ঢাকায় থাকতে হয়। ঢাকার নবাবপুরে তাঁর একটি দোকান রয়েছে। ঢাকা-বরিশাল যাওয়া–আসা করেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে বরিশালে পরিবারের কাছে যান মোজাম্মেল। গতকাল শনিবার তাঁর ঢাকায় আসার কথা ছিল। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় আসবেন বলে পরে তিনি এ পরিকল্পনা স্থগিত করেন। ঠিক করেন, আজ ভোরে বিআরটিসির বাসে করে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় আসবেন।
গতকাল শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর আজ সকাল ছয়টা থেকে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় আসার জন্য মোজাম্মেল আজ ভোরে বরিশাল শহরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখানে গিয়ে ৫০০ টাকা দিয়ে বিআরটিসির বাসের টিকিট কেনেন।
নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বিআরটিসির প্রথম বাসটি ছাড়ে আজ সকাল ৬টা ৫ মিনিটে। এ বাসের যাত্রী ছিলেন মোজ্জামেল। বাসটি সরাসরি ঢাকায় আসে।
মোজাম্মেল বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়ে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসার জন্য বিআরটিসির রোববার সকালের প্রথম বাসে উঠব বলে ঠিক করেছিলাম। সে অনুযায়ী, আজ ভোরে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে টিকিট কাটি। বিআরটিসিটির বাসটি ছাড়ার আগে মিলাদ হয়। মিলাদ শেষে সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। তারপর বাস ছাড়ে।’
যাত্রার বিবরণ দিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘সকাল ৬টা ৫ মিনিটে বরিশাল শহর থেকে বিআরটিসির বাসটি ছাড়ে। বাসটি সকাল পৌনে নয়টার একটু আগে জাজিরা প্রান্তে পৌঁছায়। তারপর পদ্মা সেতু পার হয়। সেতু পার হতে সাড়ে ৫ থেকে ৬ মিনিট লাগে। পদ্মা সেতু পার হওয়ার পর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে এসে আমাদের বাসটিকে একটু যানজটে পড়তে হয়। এ কারণে সেখানে একটু দেরি হয়। বাস থেকে ঢাকার কাপ্তান বাজারে নামি সকাল সাড়ে নয়টায়।’
কাপ্তান বাজার থেকে সরাসরি নবাবপুরে যান মোজাম্মেল। নবাবপুরে গিয়ে দোকান খোলেন তিনি।
উচ্ছ্বাস নিয়ে মোজাম্মেল বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় বরিশাল থেকে ঢাকায় এলাম। এখন চাইলেই বরিশাল থেকে এসে ঢাকায় দোকান করতে পারব। আগে তা কল্পনার বাইরে ছিল। অনেক ভালো লাগছে। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এই সেতুর জন্য দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।’
ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে বরিশালের দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটারের মতো। গত বৃহস্পতিবার মোজাম্মেল যখন ঢাকা থেকে বরিশাল যান, তখন তাঁর সময় লেগেছিল প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। সেদিন তিনি প্রথমে ঢাকা থেকে মাওয়া ঘাটে যান। সেখান থেকে স্পিডবোডে করে পদ্মা নদী পার হন। পদ্মা নদী পার হয়ে ওপারে গিয়ে বাসে করে বরিশাল যান তিনি।
মোজাম্মেল বলেন, আজ তাঁর সহযাত্রীদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। ছিলেন ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। যাত্রাপথে তাঁদের সবার মধ্যেই উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তাঁরা বলাবলি করেছেন, বরিশাল শহর থেকে বিআরটিসির দিনের প্রথম বাস যাতে ভোর পাঁচটায় ছাড়া হয়। তাহলে তাঁরা অফিস শুরুর আগেই ঢাকায় চলে আসতে পারবেন।