বন্ধের জন্য বাংলাদেশের চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত: ইউনিসেফ
বাংলাদেশে করোনা মহামারির পুরো সময়জুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা স্তর পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর যত বেশি সময় ধরে শিশুরা বিদ্যালয়ের বাইরে থাকবে, ততই সহিংসতা, শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহের ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। এতে তাদের স্কুলে ফিরে আসার সম্ভাবনা ততই কমে যাবে।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে এ তথ্য দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে, যা কোভিড-১৯–এর কারণে স্কুল বন্ধের ক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি টোমো হোজুমি বলেন, স্কুল এবং সশরীর উপস্থিত হয়ে শিক্ষা গ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিশুদের কেবল পড়াশোনার ক্ষেত্রে নয়, একই সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে। প্রান্তিক শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যা তাদের অধিকতর দারিদ্র্য ও অসমতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নিরাপদে স্কুল পুনরায় খুলে দেওয়া এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিনিয়োগ করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হওয়ার প্রেক্ষাপটে ইউনিসেফের প্রকাশিত নতুন বিশ্লেষণে বলা হয়, প্রায় ১৪ কোটি শিশুর ক্ষেত্রে স্কুলের প্রথম দিন করোনার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ এমন স্থানে বসবাস করে, যেখানে মহামারির পুরো সময় স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে সশরীর শিক্ষা গ্রহণের প্রথম দিনটির জন্য তারা এক বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছে। এ অপেক্ষা বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থীও রয়েছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, ‘স্কুলের প্রথম দিন একটি শিশুর জীবনে উল্লেখযোগ্য একমুহূর্ত। আমরা বেশির ভাগই স্কুলের প্রথম দিনের অসংখ্য ছোটখাটো স্মৃতি মনে রাখি, যেমন কী পোশাক পরেছিলাম, শিক্ষকের নাম, কার পাশে বসেছিলাম। তবে লাখ লাখ শিশুর জন্য সেই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী স্কুলগুলো গড়ে ৭৯ দিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। যদিও বিশ্বব্যাপী দেশগুলো দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে ২৯ শতাংশের কাছে এ শিক্ষা পৌঁছানো যাচ্ছে না। দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়ার জন্য সম্পদ বা উপকরণের ঘাটতি রয়েছে।
ইউনিসেফ যত শিগগির সম্ভব সশরীর উপস্থিত হয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য স্কুলগুলো পুনরায় খুলে দিতে এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তার জন্য বিস্তৃত পরিসরে পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্বব্যাংক ও ইউনেসকোর সঙ্গে মিলে ইউনিসেফ স্কুলগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য তিনটি অগ্রাধিকারের প্রতি মনোযোগ দিতে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এগুলো হলো সব শিশু ও তরুণকে স্কুলে ফিরিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচি প্রণয়ন করা; যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মনঃসামাজিক সুস্থতা ও অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য প্রত্যেকের প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত সেবা গ্রহণের সুযোগ; শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার কার্যকর ব্যবস্থা এবং শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করতে শিক্ষকদের সহায়তা দেওয়া।