বজলুরের জন্য এত দরদ

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলার পর সাময়িক বরখাস্ত ডিআইজি প্রিজন বজলুর রশিদকে দায়িত্বে ফেরানোর প্রস্তাব।

বজলুর রশিদ

কারা উপমহাপরিদর্শক বজলুর রশিদকে ‘জনস্বার্থে’ দায়িত্বে ফিরিয়ে আনতে চায় কারা অধিদপ্তর। এই কর্মকর্তা এখন জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার পর সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় রয়েছেন।

কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) মো. মোমিনুর রহমান ১২ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে দেওয়া এক চিঠিতে পাঁচজন উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি প্রিজন) বদলি বা পদায়নের প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে একজন বজলুর রশিদ। চিঠির শুরুতে পাঁচ কর্মকর্তার বদলি বা পদায়নকে জনস্বার্থের জন্য বলে উল্লেখ করা হয়। শেষ দিকে সুষ্ঠু ও সাবলীল কারা প্রশাসনের স্বার্থে এই পাঁচ কর্মকর্তার বদলি ও পদায়নের আদেশ জারির অনুরোধ করা হয়।

চিঠিতে বজলুর রশিদ সম্পর্কে বলা হয়, বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত থাকায় তাঁকে বরিশাল বিভাগীয় কারা উপমহাপরিদর্শকের দপ্তরে বদলি বা পদায়ন এবং একই সঙ্গে কারা অধিদপ্তর ঢাকায় সংযুক্ত করার প্রস্তাব করা হলো।

‘এ ধরনের প্রস্তাব কী করে পাঠায়! একজন আসামিকে নিয়ে কেন এত চিঠি, প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

কারা অধিদপ্তর এর আগে বজলুর রশিদের কর্মস্থলে উপস্থিতি ও যোগদানের দুটি আবেদন বিবেচনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। এর জবাবে ১১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়ে দেয়, সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী বজলুর রশিদের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।

এর পরদিন কারা অধিদপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বজলুর রশিদকে সংযুক্তি ও পদায়নের প্রস্তাব পাঠায়। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের প্রস্তাব কী করে পাঠায়! একজন আসামিকে নিয়ে কেন এত চিঠি, প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।’

বজলুর রশিদের বিরুদ্ধে দুদক জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে মামলা করে গত ২০ অক্টোবর। ওই দিনই তাঁকে ও তাঁর স্ত্রী রাজ্জাকুন নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিল সংস্থাটি। জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালেই মামলা করা হয় এবং বজলুর রশিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার অভিযোগপত্রে দুদক বলেছে, ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী রোডে প্রায় তিন হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাট কিনতে বজলুর রশীদ ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এ টাকা তাঁর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। সপক্ষে কোনো বৈধ উৎসও দেখাতে পারেননি তিনি। ফ্ল্যাট কেনার কোনো তথ্য তিনি আয়কর নথিতেও দেখাননি।

দুদক গ্রেপ্তারের পর বজলুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিছুদিন কারাবাসের পর গত ১ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে বজলুর রশিদ তথ্য গোপন করেছেন বলে আদালতের দৃষ্টিতে আনে দুদক। দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে দুদকের আবেদনের পর আদালত তাঁর জামিন কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। রুলটি এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

বজলুর রশিদকে পদায়নের প্রস্তাবের বিষয়ে দুদকের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘এটা তো চাকরির গুরুতর অসদাচরণ। বজলুর রশিদের বিরুদ্ধে মামলার চার্জশিট হয়েছে। সাক্ষ্য চলছে।’ তিনি বলেন, ‘সংযুক্ত মানে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি)। তাহলে কি এই আসামি আর সাময়িক বরখাস্ত নেই?’

সাময়িক বরখাস্ত একজন কর্মকর্তাকে বদলি বা পদায়নের এমন প্রস্তাব কীভাবে পাঠানো হলো জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ–বিষয়ক নিয়মটি তাঁর জানা ছিল না। যেহেতু পদ্ধতিগত ব্যত্যয় হয়েছে, সেহেতু বজলুর রশিদকে পদায়নের প্রস্তাব সংশোধন করা হবে। তিনি বলেন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনিও বলেছেন এটি সম্ভব নয়।

বজলুর রশিদ ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর কারা উপমহাপরিদর্শক পদে যোগদান করেন। তাঁর বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার নিশিন্দি গ্রামে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বজলুর রশিদের বিরুদ্ধে চলা মামলা সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে সংযুক্ত বা পদায়ন করা যাবে না, এটা কারও অজানা থাকার কথা নয়। কেন এ প্রস্তাব পাঠানো হলো, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খতিয়ে দেখা উচিত।