বছরে নিউমোনিয়ায় ২৪ হাজার শিশুর মৃত্যু

প্রতীকী ছবি

দেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর বড় কারণ নিউমোনিয়া। বছরে ২৪ হাজার ৩০০ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে নিউমোনিয়াতে। এই শিশুদের ৫২ শতাংশই মারা যাচ্ছে বাড়িতে এবং কোনো ধরনের চিকিৎসা না পেয়ে। দেশে নিউমোনিয়া প্রতিরোধের বিষয়টি যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা ততটা পাচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

আজ বুধবার রাজধানীর আইসিডিডিআরবি কার্যালয়ের আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। আগামীকাল ১২ নভেম্বর বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকার্স (আরডিএম) এবং ডেটা ফর ইমপ্যাক্ট (ডিফরআই) এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

সভার সূচনা বক্তব্যে আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের গবেষণাপ্রধান কামরুন নাহার বলেন, গত দুই দশকে স্বাস্থ্য খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে। শিশুমৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রেও অগ্রগতি রয়েছে। কিন্তু এখনো নিউমোনিয়ার কারণে প্রতিবছর ৫ বছরের কম বয়সী ২৪ হাজার শিশু মারা যাচ্ছে।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানুর রহমান। তাতে বলা হয়, ২০১১ সালে দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি ১ হাজার জীবিত-জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে ১১ দশমিক ৭ শিশু মারা যেত নিউমোনিয়াতে। বর্তমানে সেটি প্রতি হাজারে ৮ দশমিক ১। বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি এক হাজার জীবিত-জন্ম শিশুর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা তিনে নামিয়ে আনতে হবে।

প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে যেসব শিশু নিউমোনিয়াতে মারা যাচ্ছে তার ৫২ শতাংশই মারা যাচ্ছে বাড়িতে এবং কোনো ধরনের চিকিৎসা না পেয়ে। ৩ শতাংশ মারা যাচ্ছে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে। আর হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসার পরও নিউমোনিয়াতে মারা যাচ্ছে ৪৫ শতাংশ শিশু।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নিউমোনিয়ায় মৃত্যু কমাতে হাসপাতালগুলোতে ১০টি বিষয় নিশ্চিত করার কথা বলেছে। কিন্তু ২০১৭ সালে দেখা যায়, বাংলাদেশের জেলা হাসপাতালগুলোতে এই ১০টি শতভাগের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ রয়েছে। ফুসফুসের প্রদাহ থেকে নিউমোনিয়া হয়। যেসব শিশুর অক্সিজেনের স্বল্পতা থাকে তাদের নিউমোনিয়ায় মৃত্যুহার বেশি। তাই প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পালস অক্সিমিটার থাকা জরুরি।

শিশু নিউমোনিয়া বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা শিশু হাসপাতালে অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, নিউমোনিয়া প্রতিরোধের বড় উপায় শিশু জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো। ছয় মাস পর পর্যাপ্ত পরিপূরক খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।

নিউমোনিয়ার অন্যতম কারণ পরিবেশদূষণ। এটি নিয়ন্ত্রণে আনা খুব জরুরি।

নিউমোনিয়ার উপসর্গ থাকলে শিশুকে যেন বাড়িতে না রেখে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়, সে জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে।

চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সমীর সাহা বলেন, নিউমোনিয়া কোন জীবাণু দ্বারা হচ্ছে সেটির ৫০ শতাংশই এখনো অজানা। সেটি কি ভাইরাসের মাধ্যমে হচ্ছে, নাকি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে তা জানা নেই। এটি জানার উপায় আছে, কিন্তু ইচ্ছা নেই। নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে হলে এর কারণ জানার উদ্যোগ নিতে হবে।

আইসিডিডিআরবির পুষ্টি ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিস বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী জোবায়ের চিশতি বলেন, নিউমোনিয়ায় মৃত্যু প্রতিরোধে আগে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করতে হবে।

যেসব শিশু অপুষ্টিতে ভোগে তাদের নিউমোনিয়ায় মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

সমাপনী বক্তব্য দেন ইউএসএইড বাংলাদেশের মনিটরিং, ইভালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কান্তা জামিল। উপস্থিত ছিলেন আরডিএমের চিফ অব পার্টি শামস্ এল আরেফিন।