বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে যুক্ত হলো টিভি চ্যানেল ও ব্যাংক
উৎক্ষেপণের এক বছর পর বাণিজ্যিক সম্প্রচারে গেল দেশের প্রথম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ (বিএস-১)। দেশের ছয়টি টিভি চ্যানেল ও দুটি ব্যাংক এর সঙ্গে যুক্ত হলো। কিছুদিনের মধ্যেই বাকি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও যুক্ত হবে।
বাণিজ্যিক সম্প্রচারে যুক্ত হয়েও প্রথম তিন মাসের জন্য টিভি চ্যানেলগুলোকে বিনা মূল্যে সেবা দিতে হবে বিএস-১–কে। এই সময়ে বিএস-১–এর সঙ্গে টিভি চ্যানেলগুলোর কারিগরি জটিলতা থাকলে তা সমন্বয় করা হবে। এরপর বিএস-১–এর দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারবে।
দেশের প্রথম উপগ্রহ বিএস-১ উৎক্ষেপণ করা হয় ২০১৮ সালের ১১ মে বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এর ছয় মাস পর এর দায়িত্ব বুঝে পায় বাংলাদেশ। স্যাটেলাইটটির রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনাসহ সব দায়িত্ব তখন থেকে পালন করছে বিসিএসসিএল।
বিসিএসসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে টেলিভিশনের পাশাপাশি কেবল ছাড়া টিভি দেখার সুযোগ ‘ডিরেক্ট টু হোম’ সেবা (ডিটিএইচ) ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবার উদ্যোগ স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত হলো। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সঙ্গে চুক্তি হস্তান্তর করেছে দীপ্ত টিভি, বিজয় টিভি, মাই টিভি, সময় টিভি, বাংলা টিভি, যমুনা টিভি, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড।
রোববার বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এসব সেবার উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, টিভি চ্যানেলগুলো বিদেশি স্যাটেলাইটগুলোকে যে ভাড়া দিতে হতো, তার চেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে তারা একই সেবা কিনতে পারবে। যেসব টিভি চ্যানেল চুক্তি হস্তান্তর করল, তারা অগ্রযাত্রার সঙ্গে যুক্ত হলো।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এই স্যাটেলাইট সবচেয়ে প্রথম আমাদের গণমাধ্যমকে উৎসাহিত করেছে এবং গণমাধ্যমগুলোও স্যাটেলাইটের কাছে আস্থা রেখেছে।’
সাত থেকে আট বছরের মধ্যে স্যাটেলাইটের খরচ উঠে আসবে উল্লেখ করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন, সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা—এই তিনটি খাতে এই স্যাটেলাইট থেকে সুবিধা পাওয়া যাবে। ৭৭২টি প্রত্যন্ত ইউনিয়নসহ সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে এই স্যাটেলাইট কাজ করবে। স্যাটেলাইট গবেষণায় একটি বিশেষায়িত ল্যাবরেটরি স্থাপনের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
বিদেশি বাজারের চেয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে এখন মনোযোগ বলে জানিয়েছেন বিসিএসসিএলের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, এর কারণ স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইডথের আগে যা দাম ছিল, তা কমে এসেছে। তিনি বলেন, ‘এটিএম সেবাতে স্যাটেলাইট ব্যবহারের সুবিধা হলো এটি সাইবার হামলা থেকে নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন। এ কারণেই ব্যাংকিং খাত স্যাটেলাইটকে বেশি পছন্দ করে। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে আমরা উপার্জন শুরু করব।’
অ্যাটকোর সহসভাপতি ও একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু সাংবাদিকদের বলেন, ফাইবার অপটিক্যাল কেবলের মাধ্যমে সব টিভি চ্যানেল থেকে সিগন্যাল গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কেবল অপারেটররা নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিএস-১–এর দিকে তাক করে ডাউনলোড করবে এবং গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করবে। তিনি বলেন, স্যাটেলাইট নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। যদি কোথাও কাটা পড়ে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার জন্য বিএস কর্তৃপক্ষ বহুস্তরে অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবস্থা রেখেছে।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মো. জহুরুল হক, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল মকবুল, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সায়েম আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।