ফ্লাইট যে কারণে দেরিতে চলাচল করবে
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দিনক্ষণ তিন দফা বাড়িয়ে সর্বশেষ ঘোষণা অনুয়ায়ী সরকারি ছুটি থাকবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই দিন পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ রাখবে বাস-পরিবহন মালিক সমিতি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে হয়তো ২৬ এপ্রিল সড়ক, নৌ আর রেলপথে যোগাযোগ শুরু হবে। তবে দেশের বিমান চলাচল শুরু হতে পারে আর পাঁচ দিন পর। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ঘোষণা অনুযায়ী, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকবে। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত?
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইট চলাচল শুরু হলেই আকাশপথে যাত্রীদের চলাচল বেড়ে যেতে পারে। এতে করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতি উল্টো বিপরীত দিকে যেতে পারে। তাই সড়ক, নৌ ও রেল যোগাযোগ চালুর পাঁচ দিন পর ফ্লাইট চলাচল শুরু করতে চাইছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে এই সময় আরও বাড়ানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবেশী ভারত, নেপালসহ আরও কয়েকটি দেশও ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের ফ্লাইট বন্ধ রাখছে। তা ছাড়া বাংলাদেশে এখন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করার হার বাড়ছে। যদিও গতকাল শনিবারের তথ্য অনুযায়ী আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা কিছু কমেছে বলে জানা গেছে। ২৬ এপ্রিল যদি একসঙ্গে রেল, নৌ ও গণপরিবহনের সঙ্গে বিমান চলাচল শুরু হয়, তাহলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। কারণ, দীর্ঘদিন আকাশপথ বন্ধ ছিল। তাই ফ্লাইট চালু হলে অনেক যাত্রী আকাশপথে যাতায়াত করবেন। যাত্রীদের একটি চাপও আসবে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই একটু দেরি করে ফ্লাইট চলাচল শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে গত ২১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ইংল্যান্ড, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ছাড়া সব দেশের সঙ্গে যাত্রীবাহী সব বিমান সংস্থার ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছিল বেবিচক। এই সময়সীমা আরও সাত দিন বৃদ্ধি করে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এরপর গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চীন ছাড়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বিমান চলাচল নিষেধাজ্ঞা সময় বৃদ্ধির কথা জানানো হয়।
এ নিষেধাজ্ঞা বাহরাইন, ভুটান, হংকং, ভারত, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান চলাচল রুটের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বিমান চলাচল নিষেধাজ্ঞা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানায় বেবিচক। তবে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সব রুটে কার্গো, ত্রাণ সাহায্য, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি অবতরণ ও স্পেশাল ফ্লাইট চালু থাকবে।
ফ্লাইট চালু হলেও ইউরোপীয় রুটের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা থাকবে। এ কথা জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান মো. মফিদুর রহমান বলেন, ইউরোপের অবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। যেদিনই সেখান থেকে ফ্লাইট চালু হোক না কেন, সতর্কতা তো থাকবেই। তা ছাড়া যে রুটের যাত্রী হোক, তাদের ধরন ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনায় আনা হবে।
এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সাধারণ সম্পাদক ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ এপ্রিল, নাকি আরও পরে ফ্লাইট চলাচল শুরু হবে, সেটি এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তবে ২৬ এপ্রিল থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। রোজার প্রথম দিকে দেখা যায় আকাশপথে যাত্রী কম থাকে। সার্বিক বিবেচনায় একটু পরেই ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বলে জানান তিনি।