ফুল হাতে কষ্ট চেপে চলে গেলেন তাঁরা
মেঘলা আর বৃষ্টি। হাতে ফুলের গোছা। সাতসকালে এলেন উপজেলা পরিষদ চত্বরে। জানতেন না সেখানকার শহীদ মিনারটির নির্মাণকাজ আজও শেষ হয়নি। কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকলেন তাঁরা। এরপর কষ্ট মনে চেপে চলে গেলেন।
মেঘলা ও বৃষ্টি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের নদীপাড়ার বাসিন্দা। তাঁদের মতো কালীগঞ্জের অনেকেই গতকাল বুধবার একই ভুল করেছেন। উপজেলা পরিষদ চত্বরে ১৮ বছর আগে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সবাই আশা করেছিলেন, এবার হয়তো সেই কাজ শেষ হয়েছে। তবে বাস্তবে তা হয়নি। ফলে সবাইকে উপজেলা শহরের মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পূর্ব পাশে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ধারে ছিল দুটি বিশাল আকৃতির পুকুর। মাঝ দিয়ে ছিল উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে প্রবেশের পথ। ২০০১ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশেন চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে পুকুর দুটি ভরাট করা হয়। এ কাজে সহযোগিতা করেন স্থানীয় লোকজন। ভরাট হওয়া জায়গার দক্ষিণ পাশে একটি স্মৃতিসৌধ আর উত্তর পাশে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হয় ওই বছরই। এই দুটি স্থাপনা ঘিরে শুরু হয় মিনি পার্ক নির্মাণের কাজ। মিনি পার্ক আর স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে সেই কবে। তবে শহীদ মিনারের কাজ আজও শেষ হয়নি। অর্ধেক কাজ শেষ হওয়ার পর থেমে আছে। ফলে কলেজ ক্যাম্পাসের ওই শহীদ মিনারটিই স্থানীয় লোকজনের ভরসা।
গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনারের লম্বা পাঁচটি স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে। তবে মূল বেদি হয়নি। নির্মাণাধীন মিনারের নিচের অংশটি মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, ইউএনও সুশেন চন্দ্র রায় সংস্কৃতিমনা মানুষ ছিলেন। তিনি কালীগঞ্জে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। বেশ গুরুত্ব দিয়ে শহীদ মিনারের কাজ শুরু করেন। এলাকার মানুষও উৎসাহী হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যাঁরা এখানে ইউএনও হিসেবে এসেছেন, তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। ২০০৯-১০ সালে কিছুটা কাজ হয়েছিল। তারপর আর কোনো তৎপরতা নেই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।
কালীগঞ্জের বর্তমান ইউএনও উত্তম কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, কেন এত দিন হয়নি, সেই বিষয়টি তিনি বলতে পারেন না। তবে তিনি উপজেলায় একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। নির্মাণাধীন শহীদ মিনারটির কাজ দ্রুত কীভাবে শেষ করা যায়, সেই উদ্যোগ তিনি নেবেন।
উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদেরও গতকাল ভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে মাহতাব উদ্দীন কলেজ ক্যাম্পাসে যেতে হয়েছে। ইউএনওর নেতৃত্বে তাঁরা ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তবে তাঁরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভা করেন উপজেলা পরিষদ চত্বরে।
সকালে এই আলোচনা সভায় উপজেলা পরিষদের লোকজনের পাশাপাশি অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরাও অংশ নেন। তাঁরা পরিষদ চত্বরের শহীদ মিনারটির অবস্থা দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন।
আলোচনা সভায় অংশ নেওয়া বেসরকারি একটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, একটা শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শেষ দেখতে আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে?