ফাঁসি সমাজকে অপরাধ থেকে রক্ষা করে না: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন
ফাইল ছবি

সাজা তথা ‘ফাঁসি’ দিয়ে অপরাধ থেকে সমাজকে রক্ষা করা যায় না বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেছেন, যেখানে ডেথ সেনটেন্স (মৃত্যুদণ্ড) হবে, সেখানে মৃত্যুদণ্ড দিতেই হবে।

এক মামলায় এক আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ওই আসামির করা জেল আপিলের শুনানিতে আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের ভার্চ্যুয়াল আপিল বিভাগে ওই শুনানি হয়।

আদালতে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত হিসেবে আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা শুনানিতে ছিলেন। ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ শুনানি করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের বিভিন্ন রায়ের পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত শুনানিতে তুলে ধরেন বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

এর একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সেনটেন্স (সাজা), হ্যাংগিং (ফাঁসি) কিন্তু সোসাইটিকে রক্ষা করে না। ইন্ডিয়ার ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন থেকে আমাদের ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন কোনো অংশে খারাপ না। ইন্ডিয়া থেকে আমরা কোনো অংশে খারাপ না। ইন্ডিয়াতে ২০১৯-এ ডেথ সেনটেন্স হয়েছে ১২১ আর আমাদের এখানে হয়েছে ৩২৭।’

ওয়াইফ কিলিং (স্ত্রী হত্যা) কি বন্ধ হয়েছে—এমন প্রশ্ন রেখে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ওয়াইফ কিলিংয়ে তো সাক্ষীও লাগে না। প্রসিকিউশনে (রাষ্ট্রপক্ষ) ডাক্তার রিপোর্ট নিয়ে এলে হাজব্যান্ডের হয় ফাঁসি, না হলে যাবজ্জীবন হয়। আমার তো মনে হয় এটার একটা পরিসংখ্যান নেওয়া উচিত। ৮০ পার্সেন্ট মামলায় হাজব্যান্ডের সাজা হয়। এই যে সাজা হচ্ছে, ফাঁসি হচ্ছে, যাবজ্জীবন হচ্ছে—ওয়াইফ কিলিং কি কমেছে? কমেনি। সুতরাং এটা ভুল ধারণা যে সাজা দিলে সমাজে অপরাধ কমে যাবে।’

শুনানি শেষে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. জসীমের জেল আপিল আংশিক গ্রহণ করে তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন।

মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন

এরপর ক্রম অনুসারে ‘মো. মামুন বনাম রাষ্ট্র’ নামে জেল পিটিশনের ওপর আপিল বিভাগে শুনানি হয়। এটি স্ত্রী হত্যার একটি মামলা। এই মামলায় স্বামী মামুনের বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড হয়, যা হাইকোর্টে বহাল থাকে। এর বিরুদ্ধে মামুন জেল পিটিশন করেন, যেটি আজকের কার্যতালিকার ৪ নম্বর ক্রমিকে ছিল।

এ মামলায় আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের পক্ষ থেকে আসামিপক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী নাহিদ মাহতাব শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

শুনানিতে এস এম শাহজাহান বলেন, ২০০৫ সালের ২১ জুলাই থেকে মামুন কারাগারে আছেন। ১৬ বছর ধরে কারাগারে। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ২১ জুলাই থেকে অর্থাৎ ১৩ বছর ধরে কনডেম সেলে আছেন মামুন।

শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘ওয়াইফ কিলিংয়ের সংখ্যা এত বেশি যে সকাল বেলা উঠে পত্রিকায় খুললে দেখি ওয়াইফ কিলিং। ওয়াইফ কিলিং মামলায় আমরা এত ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দিলাম, কোনো তো কাজ হচ্ছে না।’

শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ আপিল খারিজ করে দেন পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড থেকে সাজা কমিয়ে আসামি মামুনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সেই সঙ্গে আসামিকে কনডেম সেল থেকে অবিলম্বে কারাগারে সাধারণ সেলে নিয়ে আসতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।