রাশিয়ার কবি ভ্লাদিমির মায়াকোভ্স্কি ছিলেন চিরপ্রেমিক। প্রেম ছাড়া যে কবিতা হয় না, এ কথা সবারই জানা। কিন্তু এই রুশ কবি মায়াকোভ্স্কি কবি হিসেবে যেমন বড়, তেমনি বড় তাঁর প্রেমিক হৃদয়ও। অনেক প্রেম এসেছে তাঁর জীবনে, প্রেমিকাদের কেউ বিবাহিত, কেউ অবিবাহিত। আর প্রত্যেকেই কবিকে নিয়ে ছিলেন দারুণ ইতিবাচক। তাঁদেরই তিনজনের মুখে কবির গল্প, তাঁর প্রেমের গল্প নিয়ে এই বই তিন প্রেমিকার মায়োকোভ্স্কি। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন।
রাশিয়ার ফিউচারিস্ট কাব্য আন্দোলনের প্রধান উদ্যোক্তা বলা হয় মায়াকোভ্স্কিকে। ১৯৯৩ সালে তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত হয় একটি বই। সে বইটি ছিল বিভিন্ন সময় মায়াকোভ্স্কির সংস্পর্শে এসেছিলেন, এমন আটজন নারীর স্মৃতিচারণা। তাঁদের মধ্যে যে তিনজন কবির হৃদয়ে গভীর দাগ ফেলতে পেরেছিলেন, তাঁরা হলেন এলসা, লিলিয়া ও ভেরোনিকা। বইটিতে মূলত তাঁদের স্মৃতিচারণাই ঠাঁই পেয়েছে।
এলসা ও লিলিয়া দুই বোন। তবে রাশিয়ায় লিলিয়াকে নিয়েই আলোচনা হতো সবচেয়ে বেশি। স্বামী ও প্রেমিক দুজনকে একত্রে ঘর ও হৃদয়ে জায়গা দিয়েছিলেন লিলিয়া। এতে আপত্তি ছিল না স্বামীর ও প্রেমিকের। তিন প্রেমিকার স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে তখনকার রাশিয়ার রাজনৈতিক সমাজবাস্তবতার ছবি। সেটা ছিল কবি মায়াকোভ্স্কির উত্থান ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠার কাল। সেই সঙ্গে সমসাময়িক সাহিত্যিক ও সরকারের অবহেলায় ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ারও, যার অনেক কিছুই সমালোচকদের চোখ এড়িয়ে গেছে। কিন্তু প্রেমিকারা কিছু লুকাননি। নারীর প্রতি মায়াকোভ্স্কির আচরণ, অনুভূতি ও তৃষ্ণার কথাগুলো তাঁদের থেকে সুন্দর করে কেই–বা বলতে পারতেন?
বইটি পড়তে বসলে উঠতে ইচ্ছে করবে না। উপন্যাসের মতো স্মৃতিচারণায় উঠে আসা প্রিয় চরিত্রটির পরিণতি জানার জন্য উদ্গ্রীব হবেন পাঠক। আদতে একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস পাঠের আনন্দ ও রোমাঞ্চ এ বই থেকে মিলবে। বইটিতে আরও রয়েছে কবির একমাত্র মেয়ের (ইয়েলেনা মায়াকোভ্স্কায়া) একটি সাক্ষাৎকার, কবির জীবনপঞ্জি এবং বইটিতে যত ব্যক্তিকে নিয়ে কথা বলা হয়েছে, তাঁদের সংক্ষিপ্ত একটি পরিচিতি।
প্রেমে টইটম্বুর, তবে রুশ বিপ্লবে সাম্যবাদের জন্য লড়াকু নান্দনিক সৈনিক মায়াকোভ্স্কির জীবনে বেদনার শেষ ছিল না। যে দেশ ও পার্টির জন্য লড়েছিলেন, সেই দেশ ও পার্টি একসময় সীমাহীন অবজ্ঞা করেছে কবিকে। আত্মহত্যার প্রবণতা ছিল কবির। আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ব্যক্তিজীবনের অনিশ্চয়তা আর সামাজিক অবজ্ঞায় রিক্ত হয়ে নিজের বুলেটে নিজেকে শেষ করে দিয়েছিলেন কবি। বিংশ শতাব্দীর প্রায় ছয় যুগ ধরে কয়েকটি প্রজন্ম তাঁদের স্বপ্ন ও বাস্তবের মিলিত স্নেহচ্ছায়া খুঁজে নিয়েছিল ম্যাক্সিম গোর্কি, মায়াকোভ্স্কি ও চে গুয়েভারার মধ্যে। সেদিক থেকে মায়াকোভ্স্কির নামটি আলোচিত। সরাসরি রুশ থেকে বাংলায় জাহীদ রেজা নূর অনূদিত এ বইটিকে বলা যেতে পারে এ বছরের বইমেলার অন্যতম ভালো বই। বইমেলায় বইটি পাওয়া যাবে প্রথমার প্যাভিলিয়নে।