প্রথম আলো সত্য প্রকাশে অবিচল থাকবে

যশোরে প্রথম আলোর সুধী সমাবেশে অতিথিদের একাংশ। যশোর শিল্পকলা একাডেমি, ১৮ ডিসেম্বর। ছবি: এহসান-উদ-দৌলা
যশোরে প্রথম আলোর সুধী সমাবেশে অতিথিদের একাংশ। যশোর শিল্পকলা একাডেমি, ১৮ ডিসেম্বর। ছবি: এহসান-উদ-দৌলা

শীতের পড়ন্ত বিকেল। যশোর শিল্পকলা একাডেমি। প্রথম আলোর সুধী সমাবেশ তখনো শুরু হয়নি। মিলনায়তনে আমন্ত্রিত অতিথিদের সানন্দ উপস্থিতি। পরিপাটি অনুষ্ঠানে সুধী সমাবেশ শুরুর ঘোষণা দিলেন প্রথম আলোর যশোর জেলা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম। অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে প্রথম আলোর সাহসের ১৯ বছর পেরিয়ে দুই দশকে পদার্পণে পত্রিকাটির ভবিষ্যৎ ভূমিকার কথা তিনি উল্লেখ করলেন।

এরপর নান্দাইলের সাত সাহসী কিশোরীর বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ নিয়ে গড়ে তোলা ঘাসফুল নামের সংগঠনের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

শুরুতে মঞ্চে আসেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোর সফলতা ও অর্জনের পেছনে আপনারা ছিলেন, আছেন ও আগামীর পথচলায় থাকবেন-এ প্রত্যাশা করি। আপনারা জানেন, প্রথম আলো নানা সংকট পেরিয়ে আজ এখানে। প্রথম আলোর সুহৃদ ও অন্তরঙ্গ পাঠক হিসেবে আপনাদের অভিনন্দন জানাই।’

মতিউর রহমান বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন আমাদের গড় আয় বাড়ছে। মাঠপর্যায়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তরুণেরা দেশকে এগিয়ে নিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। প্রথম আলো আগামী দিনে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, সফল কৃষি, সেরা শিক্ষকদের সম্মাননা জানাবে।’

মতিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণকে ইউনেসকো স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা একটা বড় অর্জন। আপনারা পাঠক, প্রথম আলোর প্রাণ। নানা সংকটের মধ্য দিয়ে প্রথম আলো সত্য প্রকাশে অবিচল থাকবে। পিছপা হবে না। প্রথম আলো বাংলাদেশের সফলতা, বাংলাদেশের বিজয় দেখতে চায়।

অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক, ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযূষকান্তি ভট্টাচার্য এবং মৌমাছি স্কুলের অধ্যক্ষ শ্রাবন্তী বিশ্বাস বক্তব্য দেন।

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম আলো একটি সাহসী ও সুন্দর পত্রিকা। সারা বিশ্বের বাংলাভাষী মানুষ এটা পড়ে। আমি মনে করি, পত্রিকায় যেখানে খবর ছাপা হয়, সেখানেই প্রতিবাদ ছাপা উচিত।’

সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, মানুষ মুক্তচিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারছে না। প্রথম আলো পত্রিকা হিসেবে সাহসী ভূমিকা রাখছে।

জহিরুল ইসলাম চাকলাদার বলেন, স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক খবর প্রথম আলোর ঢাকা সংস্করণে থাকে না। ফলে সবাই সে খবর দেখতে পান না। তিনি বলেন, প্রথম আলো অনেক সাহসী পত্রিকা। তবে মাঝেমধ্যে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে।

ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। যশোরের প্রধান সমস্যা নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা। ভবদহ সমস্যা এবং কপোতাক্ষ ও ভৈরব নদ বিষয়ে প্রথম আলোতে আরও বেশি প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানান তিনি।

শ্রাবন্তী বিশ্বাস বলেন, পরীক্ষা ও বইয়ের ব্যাগের ভারে শিশুদের কোমর ভেঙে যাচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য প্রথম আলোকে আরও ভূমিকা রাখতে হবে।

সাগরদাঁড়িতে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামে একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবির ব্যাপারে প্রথম আলোর অবস্থান, নারী ও শিশু পাচারের ব্যাপারে আরও বেশি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে কি না, বাউলদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রথম আলো প্রতিবেদন প্রকাশ করবে কি না, বাংলা বানানের অসংগতি নিয়ে প্রথম আলোর অবস্থান কী-প্রশ্নোত্তরপর্বে এ রকম নানা ধরনের প্রশ্ন করেন উপস্থিত সুধীরা।

প্রশ্নোত্তরপর্বে প্রশ্ন করেন কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম, ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী, যশোর উপশহর মহিলা ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ শাহনাজ পারভীন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি যশোরের সমন্বয়কারী নাসিমা খাতুন, নারী উদ্যোক্তা নাছরিন আক্তার, সরকারি বিএল কলেজের প্রভাষক জোবায়ের হোসেন, বাউল আবদুল জলিল, দৈনিক যুগান্তর-এর কেশবপুর প্রতিনিধি আজিজুর রহমান, তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে আলোচিত আশরাফ হোসেন, ব্যাংক কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখ, কেশবপুর নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিকী প্রমুখ।

সম্পাদক মতিউর রহমান, উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি, যশোর প্রতিনিধি মাসুদ আলম ও বাণিজ্য প্রতিনিধি জয়ন্ত কুমার সাহা সুধীজনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

অনুষ্ঠানে অতিথিদের আপ্যায়িত করে ইস্পাহানি মির্জাপুর চা কোম্পানি লিমিটেড।