২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

প্রতি পাঁচজনে একজন মেয়ে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত: গবেষণা

অনলাইনে মিথ্যা তথ্যের কারণে প্রতি পাঁচজনের একজন কিশোরী ও তরুণী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আর এসব মিথ্যা-ভুল তথ্য ও গুজব তাদের কোভিড-১৯ থেকে শুরু করে রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে সম্পৃক্ত হওয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত এক বৈশ্বিক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, এ গবেষণায় বিশ্বের ২৬টি দেশের ২৬ হাজারের বেশি কন্যাশিশু, কিশোরী ও তরুণীর ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশসহ ১৮টি দেশের কয়েক শ কন্যাশিশু, কিশোরী ও তরুণীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৫ শতাংশের মতে, ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি ভুল ও মিথ্যা তথ্য ছড়ায়। এর পরেই আছে টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইউটিউব।
এ গবেষণার ফলাফল কিশোরী ও তরুণীদের জীবনে ভুল ও মিথ্যা তথ্যের প্রভাবের বাস্তব পরিণতি তুলে ধরেছে বলে মনে করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল। পরিস্থিতি উত্তরণে শিশু ও তরুণদের প্রযুক্তিগত শিক্ষা নিশ্চিতে সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতি তিনজনের একজন জানিয়েছে, মিথ্যা তথ্য তাদের চিন্তিত, আতঙ্কিত ও বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। অনলাইনে মতামত আদান-প্রদানের ফলে সমাজে যে উত্তেজনা তৈরি হয়, তাতে তারা নিজেদের অনিরাপদ মনে করে।

এ ছাড়া ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অনুষ্ঠান বা আয়োজনের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, যেগুলো তাদের শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকির মুখে ফেলে বলে জানিয়েছে অনেকে। ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য উপদেশ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা।

দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৮ শতাংশই কোভিড-১৯–সংক্রান্ত কোনো মিথ্যা তথ্য বা কুসংস্কার বিশ্বাস করেছে। অপর দিকে প্রতি চারজনের একজন, অর্থাৎ ২৫ শতাংশ কোভিড-১৯–এর টিকা নেওয়া উচিত হবে কি না, সেই প্রশ্ন করেছে অনলাইন মাধ্যমে।

জরিপে অংশ নেওয়া কিশোরী ও তরুণীদের প্রতি পাঁচজনের একজন (১৯ শতাংশ) জানিয়েছে, অনলাইনে মিথ্যাচার এত বেশি যে তারা নির্বাচনের ফলাফলকে অবিশ্বাস করেছে। আর পাঁচজনের মধ্যে একজন (১৮ শতাংশ) এই মিথ্যাচারের কারণে রাজনীতি বা সাম্প্রতিক ঘটনাবলির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

জরিপের ফলাফলমতে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের কিশোরী ও তরুণীদের অনলাইনে মিথ্যা তথ্যে প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি এবং উচ্চ আয়ের দেশের মেয়েদের তুলনায় দ্বিগুণসংখ্যক মেয়ে কোভিড-১৯–এর টিকা গ্রহণ করবেন কি না, সেই প্রশ্ন করেছেন।
অনলাইনে ভুল তথ্য ও অসত্য তথ্যের লিঙ্গভিত্তিক প্রভাব পরীক্ষা করার জন্য এই প্রথম বৃহৎ পরিসরে বিশ্বব্যাপী এ গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৯ কিশোরী ও তরুণী (৮৭ শতাংশ) মনে করে, এটি তাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিশ্বব্যাপী জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই বিশ্বস্ত তথ্য পেতে বিশ্বাস করে, এমন কোনো অনলাইন উৎস এ জরিপে পাওয়া যায়নি। অংশগ্রহণকারীদের ৪৮ শতাংশ নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবারের সদস্য ও সরকারের ঊর্ধ্বে মূলধারার সংবাদমাধ্যমকে বিশ্বাস করে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ওয়েলসের বাসিন্দা শারল্যেটের (২৩) মতে, ইন্টারনেটে মিথ্যা তথ্যের আধিক্য মানুষকে ‘খুব বিপদাপন্ন’ করে তুলতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, কখনো কখনো অনলাইন দুনিয়ায় জবাবদিহির অভাব থাকে। সে কারণে এখানে যে কেউ যা কিছু করতে পারে।’

কেনিয়ার নাগরিক ২০ বছর বয়সী মিয়া বলেন, ‘আমরা এমন এক দুনিয়ায় বাস করছি, যেখানে সবকিছু ইন্টারনেটের মাধ্যমে হচ্ছে। আমরা সবকিছু প্রযুক্তির মাধ্যমে করছি। তাই আমি মনে করি, প্রযুক্তিগত শিক্ষাও স্কুলের প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দেওয়া উচিত, যাতে আমরা যখন বড় হয়ে উঠব, আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে বিষয়ে আরও পরিষ্কার ধারণা রাখব।’
বাংলাদেশের আঁচল (২১) বলেন, ‘যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি আছে, সেগুলো আমি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলি। সেই অ্যাকাউন্টগুলো আনফলো করে দিই।’

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের জেন্ডার ট্রান্সফরমেটিভ পলিসির নির্বাহী পরিচালক ভাগ্যশ্রী ডেংগলে বলেন, গবেষণায় এটি স্পষ্ট যে অনলাইনে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়াতে বাস্তব জীবনের পরিণতি রয়েছে। এটি বিপজ্জনক, এটি মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে এবং এটি তাদের জনজীবনে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখে। তিনি আরও বলেন, মেয়েদের নিরাপদ সিদ্ধান্ত নিতে এবং তাদের জীবনের ওপর ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতে সত্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন মেয়েরা জানে না, কী বিশ্বাস করতে হবে, কাকে বিশ্বাস করতে হবে এবং কোথায় সত্য খুঁজতে হবে।

এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিশ্বের জন্য আমাদের মেয়ে ও শিশুদের দক্ষ করে তুলতে হবে। এ জন্যই আমরা শিক্ষা কার্যক্রমে প্রযুক্তিগত সাক্ষরতা অন্তর্ভুক্ত করতে মেয়েদের আহ্বানকে সমর্থন করছি।’