চট্টগ্রাম নগরে বাসায় গিয়ে দুই যুবককে টিকাদানের ঘটনায় সোমবার মামলা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, কাট্টলীর মোস্তফা হাকিম মাতৃসদনের ল্যাব টেকনিশিয়ান বিষু দে নিয়ম ভেঙে গত শনিবার বাসায় গিয়ে দুই ব্যক্তিকে করোনার টিকা দিয়েছিলেন। প্রতি ডোজের জন্য নেওয়া হয়েছে এক হাজার টাকা। এ কাজে দুজনকে সহায়তা করেন তাঁদের এক ব্যাংকার বন্ধু।
বাসায় গিয়ে টিকা দেওয়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর টিকা গ্রহণকারী ব্যবসায়ী মো. হাসান (৩৫) ও সহায়তাকারী ব্যাংকার মোবারক আলীকে (৩২) গ্রেপ্তার করেছে খুলশী থানার পুলিশ। গতকাল সকালে মোবারককে এবং আগের দিন রাতে হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল বিকেলে নগরের খুলশী থানায় মামলা করেছেন করপোরেশনের জোনাল চিকিৎসা কর্মকর্তা তপন কুমার চক্রবর্তী। মামলায় গ্রেপ্তার দুজন যথাক্রমে ১ ও ২ নম্বর আসামি।
মামলায় বিষুকে ৩ ও অপর টিকাগ্রহীতা মো. সাজ্জাদকে (২৭) ৪ নম্বর আসামি করা হয়। তাঁরা দুজনই পলাতক। টিকা গ্রহণকারী দুজন ও মোবারক আলী শুলকবহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোরশেদুল আলমের প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
তবে মোরশেদুল আলম দাবি করেন, তাঁর ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ টিকা থেকে ওই দুজনকে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি বরং তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
সূত্র জানায়, একজন প্রতিবন্ধী বৃদ্ধকে টিকা দিতে হবে বলে বিষুকে নিয়ে যান মো. হাসান। তবে এই টিকা কোন কেন্দ্র থেকে নেওয়া হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন থেকেই এই টিকা জাকির হোসেন সড়কের জোনাব আলী ভবনে গিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ও ডোজের পরিমাণ সঠিক ছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মো. হাসান নিজের বাসায় বসে টিকা গ্রহণ করছেন, এ রকম একটি ছবি আপলোড দিয়ে মোবারক আলী, সাজ্জাদসহ কয়েকজনকে ট্যাগ করেন। এ নিয়ে সমালোচনা হলে হাসান তা মুছে ফেলেন।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীনুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাসান ও মোবারক স্বীকার করেছেন টাকা দিয়ে বিষুকে এনে টিকা নিয়েছেন। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনার পর টিকা নিয়ে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য দপ্তরে তোলপাড় শুরু হয়। কোন কেন্দ্র থেকে, কীভাবে টিকা বাইরে গেল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। ফেসবুকে আপলোড করা ছবির স্ক্রিনশট দেখে মোস্তফা হাকিম মাতৃসদনের দায়িত্বরত চিকিৎসা কর্মকর্তা সুমন তালুকদার বিষুকে শনাক্ত করেন।
জানতে চাইলে সুমন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কীভাবে, কোথা থেকে টিকা নিয়েছেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে আমাদের টিকার হিসাবে গরমিল নেই। প্রত্যেক ব্যক্তিকে পাঁচ এমএল করে ডোজ দেওয়ার কথা। একটি ভায়াল থেকে যদি চার এমএল করে দিয়ে দুই ডোজ সরিয়ে ফেলেন, তাহলে তা কীভাবে পাহারা দেব? আমি খালি ভায়ালেরও হিসাব নিই তাঁদের কাছ থেকে।’
এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সিটি করপোরেশন কিংবা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, কে টিকা দিলেন, এর পেছনে কারা রয়েছেন—সবাইকে খুঁজে বের করা হবে। এর সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্যকর্মীকেও খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এভাবে বাসায় বসে টিকা নেওয়া ও দেওয়া অপরাধ। এটা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ দেখছে।