প্রক্টরের পদত্যাগ ও নিহত ছাত্রের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি রাবি শিক্ষার্থীদের
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ট্রাকচাপায় নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার, প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের প্রত্যাহার, ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলো সংস্কার এবং সব জায়গায় পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা করা।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তারকে লিখিতভাবে এসব দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। পরে তারা এদিনের মতো বিক্ষোভ শেষ করে চলে যান।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে উপাচার্য প্রক্টরিয়াল বডি অপসারণে মৌখিক আশ্বাস দেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রক্টর হিসেবে কেউ নেই। এই পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আছেন শিক্ষক মো. লিয়াকত আলী। তবে সম্প্রতি তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র মাহমুদ সাকি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিসি স্যার লিখিতভাবে আমাদের দাবিগুলো গ্রহণ করেছেন। আজকে রাতের মতো এখানেই কর্মসূচি শেষ করা হচ্ছে।’
এর আগে রাত পৌনে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকাজের মালপত্র বহনকারী ট্রাকের চাপায় প্রাণ হারান চারুকলা অনুষদের ছাত্র মাহমুদ হাবিব। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাকের নিচে একটি মোটরসাইকেল দেখা যায়। পাশেই পড়ে ছিল মাহমুদ হাবিবের মরদেহ। দুর্ঘটনায় তাঁর শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাত পৌনে ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে তাঁর মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মাহমুদ হাবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি নাটোরে। এই দুর্ঘটনায় রায়হান প্রামাণিক নামে তাঁর এক বন্ধু আহত হয়েছেন। চারুকলার সিরামিক ও ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর খবর প্রকাশের পর হাজারখানেক শিক্ষার্থী বেরিয়ে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। ক্যাম্পাসের মধ্যে পাঁচটি ট্রাকে আগুন দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। সেখানে নির্মাণকাজে যুক্ত শ্রমিকদের থাকার জন্য তৈরি করা দুটি ঘরেও আগুন দেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের একটি দল ক্যাম্পাসসংলগ্ন ঢাকা–রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন।
রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের অনেক জায়গায় বাতি নেই। দুর্ঘটনাস্থলে বাতি থাকলে হয়তো মাহমুদকে এভাবে প্রাণ দিতে হতো না।
বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে রাতে ক্যাম্পাসে যান রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। রাত পৌনে একটার দিকে এই দুই নেতা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে উপাচার্যের বাসার সামনে যান। সে সময় উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বা প্রক্টরিয়াল টিমের কেউ ক্যাম্পাসে না থাকায় শিক্ষার্থীরা এই দুই নেতার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। পরে তাঁরা ক্যাম্পাস ছেড়ে যান।
উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে যাওয়ার আগে কয়েক দফায় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ট্রাকচালক গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থল হবিবুর রহমান হলের সামনে নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবনের কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তিনি।