পোড়া পা নিয়ে কাভার্ড ভ্যান চালিয়ে সীতাকুণ্ড থেকে ফটিকছড়িতে কিশোর আনোয়ার
কিশোর আনোয়ার হোসেন (১৭)। কাভার্ড ভ্যানের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। গতকাল শনিবার সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর চালকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এমন অবস্থায় অদম্য সাহস নিয়ে আগুনের ভেতর থেকে কাভার্ড ভ্যান নিয়ে বের হয়ে আসে আনোয়ার। ঝুঁকি নিতে গিয়ে দুই পা সামান্য পুড়ে যায় তাঁর। এরপর গাড়ির চালক সোহেল রানাকে খুঁজলেও তাঁর কোনো হদিস মেলেনি।
গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আনোয়ারকে। সেখানেই তাঁর সঙ্গে কথা হয়। দুই পায়ে ব্যান্ডেজ। আগুনের ধোঁয়ার তখনো চোখ জ্বালাপোড়া করছে। বারবার চোখ মুছছে।
আনোয়ার জানায়, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে চালকসহ কাভার্ড ভ্যান নিয়ে ডিপোতে ঢোকে সে। তাদের গাড়ি থেকে কনটেইনার আনলোড করার কথা ছিল। কিন্তু সামনে আরও গাড়ি থাকায় কনটেইনার খালাস করতে সন্ধ্যা পার হয়ে যাচ্ছিল। এই ফাঁকে সন্ধ্যার দিকে কাভার্ড ভ্যানে ঘুমিয়ে পড়ে আনোয়ার। তাঁর ভাষ্যমতে, তখন বরিশালের চালক সোহেল রানা ভিডিও কলে গাড়ির বাইরে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন।
এর মধ্যে রাত নয়টার দিকে কনটেইনারে আগুন লেগে তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। একপর্যায়ে বিস্ফোরণ হলে আনোয়ার আর চালককে খুঁজে পায় না। তখন আগুন কাভার্ড ভ্যানের কাছাকাছি চলে আসে। উপায়ন্তর না দেখে নিজেই চালকের আসনে বসে গাড়ি টান দেয় আনোয়ার। ডিপো থেকে বের করে বায়েজিদ হয়ে ফটিকছড়ির দিকে রওনা দেয় সে।
হাসপাতালে বিছানায় বসে আনোয়ার জানায়, রাত ১১টার পর সে গাড়ি নিয়ে ডিপো থেকে বের হয়ে পড়ে। তখন তাঁর চোখ জ্বালাপোড়া করছিল। বায়েজিদ সংযোগ সড়কে এসে ছড়ার পানিতে এক জায়গায় গোসল করে। এরপর ফটিকছড়ি চলে যায়। কিন্তু গাড়িতে জিপিআরএস থাকায় মালিক মনে করেন গাড়ি ছিনতাই হয়ে গেছে। কারণ, এ সময় গাড়িটি বায়েজিদ কিংবা ফটিকছড়ি থাকার কথা না।
গাড়িটি নিয়ে এভাবে রুদ্ধশ্বাস ছুটে চলার একপর্যায়ে ফটিকছড়িতে পুলিশ গাড়িসহ আনোয়ারকে আটকে দেয়। তখনো পায়ে ব্যথা নিয়ে তাঁর কোনো হুঁশ নেই। গাড়ি থেকে নেমে পুলিশকে পুরো ঘটনা জানায় সে। পরে মালিককে ফোন করেও ঘটনার বর্ণনা দেয় সে।
আনোয়ার বলে, ‘এরপর পায়ের ব্যথা শুরু হয়। তখন দেখি কেমিক্যালের আগুনে আমার পা পুড়ে গেছে। তখন মালিক আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।’
ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আহত শাহজালালকে পাওয়া যায় হাসপাতালে। তার বয়সও ১৮ বছরের বেশি নয়। শাহজালাল জানায়, সে একটি ট্রান্সপোর্টে কাজ করে। আগুন লাগার পর ডিপো থেকে তাঁরা গাড়ি বের করতে থাকে। কিন্তু রাত ১১টার দিকে বিস্ফোরণে বেশির ভাগ গাড়ির কাচ উড়ে যায়। তখন শেষ গাড়ি বের করার সময় আগুনের হলকা এসে মুখে লাগে।
অপর প্রত্যক্ষদর্শী বিসমিল্লাহ ট্রান্সপোর্টের হেলপার মো. রনি আহত হয়নি। সেও গাড়ি বের করেছিল। কয়েকটি গাড়ি বের করার পর সে আর ভেতরে যেতে পারেনি।