পুলিশকে সনদ দেখাতে পারেননি মাইন্ড এইডের ফাতেমা

আনিসুল করিম

পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে হত্যার মামলায় বেসরকারি মাইন্ড এইড অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি ডি-অ্যাডিকশন সেন্টারের অন্যতম মালিক ফাতেমা আক্তারকে বৃহস্পতিবার ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে ওই ঘটনায় মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। ফাতেমা ওই হাসপাতালে চিকিৎসা দিলেও তিনি তাঁর ডিগ্রির সনদ দেখাতে পারেননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আনিসুল করিম হত্যা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ফাতেমা মাইন্ড এইড অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি হাসপাতালের কথিত মনোরোগ চিকিৎসক। তাঁকে আজ শুক্রবার আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে মারধরের ভিডিও ফুটেজ দেখে কার কী ভূমিকা ছিল, জিজ্ঞাসাবাদ করে সে বিষয়গুলো মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। রিমান্ডে থাকা আসামিরা এলোমেলো তথ্য দিচ্ছেন। তাঁরা একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। তাঁদের দাবি, হাসপাতালে আসা রোগীদের সমস্যার ধরন দেখে চিকিৎসা বলে দিতেন ফাতেমা আক্তার। প্রথম অবস্থায় সবাইকে মারধর করে দুর্বল করে ফেলা হতো। পরে বাইরে থেকে চিকিৎসক এনে দেখানো হতো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর চিকিৎসা পরামর্শ দিতেন ফাতেমা। তিনি মনোবিজ্ঞানে পড়েছেন এবং পরে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। তবে ফাতেমা তাঁর ডিগ্রির কোনো সনদ দেখাতে পারেননি। এ কারণে তাঁর নামে হত্যার পাশাপাশি অপচিকিৎসা তথা প্রতারণার মামলাও করা হতে পারে।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন মাইন্ড এইড অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি হাসপাতালে পুলিশ কর্মকর্তা যখন নিথর হয়ে পড়েছিলেন, তখন সেখানে উপস্থিত অ্যাপ্রোন পরা এক নারীকে আনিসুলের বুকে চাপ দিতে দেখা যায়। তিনি প্রকৃত চিকিৎসক কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ওই নারীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল

পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিম হত্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ১০ নভেম্বর ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

সিভিল সার্জন মঈনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালটি মানসিক চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিয়েছিল কি না, সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন সেভাবে তৈরি করা যায়নি। কারণ হিসেবে তিনি হাসপাতালে গিয়ে কথা বলার মতো কাউকে পাননি। বেশির ভাগই গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। অন্যরা পলাতক। যতটুকু জানা গেছে, প্রতিবেদন আকারে তা জমা দেওয়া হয়েছে।

আরেকটি কমিটির তদন্ত চলছে

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিম মৃত্যুর ঘটনায় ১০ নভেম্বর তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আসার পর পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমের সঙ্গে কেউ খারাপ আচরণ করেননি। এখানে কেবিন না পাওয়ায় তাঁরা এই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। পুলিশ কর্মকর্তাকে এখান থেকে অন্য হাসপাতালে নিতে কারও প্ররোচনা ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে তিন দিনে হয়তো তদন্ত শেষ করা যাবে না। এ জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন জানানো হবে।

গত সোমবার রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-অ্যাডিকশন হাসপাতালে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আনিসুল করিমকে মারধর করে হত্যা করার অভিযোগে হাসপাতালটি মালিকসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।