পুলিশ যেন বিতর্কিত না হয়: টিআইবি
কঠোরভাবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এবং কোনো রকম ভয়ভীতি, পক্ষপাত ও স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিতর্কিত না হয়, সে দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বিবৃতিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি একগুচ্ছ দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। সে দাবিগুলোর বেশির ভাগই যৌক্তিক, ইতিবাচক এবং বিবেচনার যোগ্য। পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীতে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম বাস্তবায়ন, বিশেষ করে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। তিনি বলেন, আমরা উৎসাহিত হয়েছি যে, পুলিশ সপ্তাহ ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘নিরীহ কেউ যেন হয়রানি নির্যাতনের শিকার না হন’ তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার দোষী, নির্দোষ, সন্দেহভাজন, অভিযুক্ত বা নিরীহ সবার আইনি সুরক্ষা পাওয়া সংবিধানে স্বীকৃত অধিকার; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনের আওতায় থেকে দায়িত্ব পালন করবে এটা নিশ্চিতভাবেই আইনগত বাধ্যবাধকতা। যা ভুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ আমাদের আশান্বিত করেছে, একই সঙ্গে আমরা নিশ্চিত হতে চাই যে, বিনা বিচারে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আর কাউকে নিহত হতে হবে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা অর্জনের বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা অর্জনে রজন্য তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা অবশ্যকরণীয়। যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পুলিশ বাহিনী সর্বোচ্চ পেশাদারির পরিচয় দেবে, জনগণের জানমাল রক্ষায় এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কখনোই বিতর্কিত ভূমিকা নেবে না এমনটাই প্রত্যাশিত। অথচ নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন, কোটাবিরোধী আন্দোলন এবং কথিত ‘রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণামূলক’ সাক্ষাৎকারের জন্য গ্রেপ্তারকে ‘পেশাগত দক্ষতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদক পাওয়ায় আমরা বিচলিত বোধ করছি। কারণ এসব ঘটনার প্রতিটির ক্ষেত্রেই পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’, ‘পক্ষপাতিত্ব’ বা ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগ সর্বজনবিদিত।
পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশ সদস্যরা যেকোনো ধরনের দলীয় প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরে শুদ্ধাচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি চর্চা সকল নাগরিকের নিরাপত্তা ও আইনের সমান সুযোগ লাভের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য। তাই শান্তি ও জনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ আইন লঙ্ঘনকারীকে বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীকে সর্বোচ্চ পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের যেসব অভিযোগ উঠেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই বাহিনীর প্রতি জনগণের নির্ভরশীলতা প্রতিষ্ঠায় এই মুহূর্তে এটাই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা ও পেশাদারি বৃদ্ধিতে যুগোপযোগী, যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধি করে এই বাহিনীকে আরও শক্তিশালী, জনমুখী এবং অধিকতর দক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার আন্তরিকভাবে আরও সচেষ্ট হবেন, এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।