পুরান ঢাকায় অভিযানে বাধার মুখে টাস্কফোর্স, গাড়ি ভাঙচুর
পুরান ঢাকার শহীদনগরে রাজনারায়ণ রোডে অবৈধ রাসায়নিক ও প্লাস্টিকের কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের একটি দল। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা টাস্কফোর্স সদস্যদের দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে লালবাগ থানার পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। অভিযানে বাধা দেওয়ার সময় বিদ্যুতের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
গতকাল শনিবারও পুরান ঢাকার বকশীবাজারের জয়নাগ রোডে নিষিদ্ধ রাসায়নিক গুদাম, পলিথিন ও প্লাস্টিকের কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছিল টাস্কফোর্সের সদস্যরা। তাঁরা ব্যবসায়ীদের বাধায় পুরান ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। অবশ্য পরে দ্বিতীয় দফায় গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের হস্তক্ষেপে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে রাসায়নিক গুদাম, পলিথিন, প্লাস্টিকসহ মোট ১৩টি কারখানার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
আজ সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ১২টার দিকে রাজনারায়ণ রোডে ২/৩ হোল্ডিং নম্বরে অভিযান চালিয়ে অবৈধ প্লাস্টিকের চারটি টিন শেড কারখানা, একটি পাঁচতলা ভবনে রাসায়নিক ও প্লাস্টিকের কারখানার সন্ধান পায় টাস্কফোর্স টিম-২ দল। এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা কারখানার ভেতরে ঢাকা জেলা পরিষদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুবর্ণা শিরীন ও সিটি করপোরেশন প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হাসানসহ টাস্কফোর্স-২ এর সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে। জাহিদ হাসান সাংবাদিকদের বলেন,‘ অবরুদ্ধের বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে লালবাগ থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। তাদের সহায়তায় বেলা সোয়া দুইটার দিকে আমরা বের হই।’ পরে ওই সব কারখানার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, টাস্কফোর্সের শুধু নিষিদ্ধ রাসায়নিক গুদামের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার কথা। কিন্তু তারা রাসায়নিকের পাশাপাশি পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই প্লাস্টিক ও পলিথিনের কারখানা ও গুদাম উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কোনো কথাই শুনছে না। তাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি, এমনকি পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়নি। তাই উচ্ছেদ করলে তারা কোথায় যাবে এ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পুরান ঢাকা থেকে সব রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে ফেলতে সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে আজ তৃতীয় দিনের মতো অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় টাস্কফোর্স। আজ সেখানে মোট পাঁচটি দল অভিযান চালাচ্ছে। এর মধ্যে ২ নম্বর দলটি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চকবাজারের আকবর লেনে অভিযান চালায়। এ সময় ২৭ নম্বর হোল্ডিং, ২৯/১ হোল্ডিং, ২৯/২ হোল্ডিংয়ের মধ্যে প্লাস্টিক ও পলিথিনের কারখানা ছিল। এগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির লাইন বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে।
এর পাশাপাশি চকবাজার এলাকার আরও কয়েকটি গুদামে অভিযান চালানো হয়। তবে সেগুলোতে দাহ্য বা কেমিক্যাল পাওয়া যায়নি। সাড়ে ১২টার দিকে দলটি অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল, পলিথিনের কারখানা, প্লাস্টিকের কারখানা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অভিযান শুরু হয়। ওই দিন সাতটি রাসায়নিক কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়। গতকাল ১৩টি কারখানায় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। আজ আরও চারটি দল অভিযান পরিচালনা করছে।
টাস্কফোর্সের অভিযানের প্রতিবাদে দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত লালবাগ চৌরাস্তা অবরোধ করে রাখেন ব্যবসায়ীরা। এতে আশপাশের সব রাস্তার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সিটি করপোরেশনের ঘোষণায় বলা হয়, ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে এলাকার জনগণের নিরাপত্তার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ওই এলাকার রাসায়নিকের মজুত থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এ নির্দেশ অমান্য করা হলে বাড়ির মালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চুড়িহাট্টার ৬৪ নম্বর ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৭১ জন মারা গেছেন। প্রাথমিক তদন্তে আগুনের কারণ হিসেবে রাসায়নিককেই দায়ী করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর থেকেই পুরান ঢাকার আবাসিক ভবনগুলো থেকে রাসায়নিক সরানোর নির্দেশ দিয়েছে সিটি করপোরেশন।