পিছিয়ে থাকা কলেজ জাতীয়করণে শিক্ষকসহ দুজনের মৃত্যু

প্রাচীন ও সুপ্রতিষ্ঠিত কলেজকে বাদ দিয়ে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা একটি কলেজকে জাতীয়করণের কারণেই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদসহ দুজনের অকালমৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় সরকার-সমর্থক বেসরকারি শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ কলেজশিক্ষক সমিতির করা একটি বেসরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আর্থিক সহায়তা এবং প্রকাশ্য নীতিমালা করে কলেজসহ দেশের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের সুপারিশ করা হয়। আজ রোববার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাতে প্রতিবেদনটি তুলে দেন সমিতির সভাপতি আসাদুল হকের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা। সমিতি জানিয়েছে, বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া বক্তব্য ও তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ফুলবাড়িয়া কলেজ। ১৯৭৩ সালে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। কলেজে ছাত্রছাত্রী প্রায় ছয় হাজার। উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক পাস, সম্মান ও বিকম শাখা চালু আছে। ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পরিদর্শক দল কলেজ পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে কলেজটি জাতীয়করণের সব শর্ত পূরণে সক্ষম বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এমপিওবিহীন উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়া হয়। এই কলেজ পরিচালনার পর্ষদের সভাপতি স্থানীয় সাংসদের ছেলে। এই কলেজ জাতীয়করণের ঘোষণায় এলাকাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। ক্ষুব্ধ ফুলবাড়িয়া কলেজের ছাত্র-শিক্ষকেরা দেড় মাস ধরে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করেন।
২৭ নভেম্বর শিক্ষক নিহত হওয়ার বর্ণনা দিয়ে প্রতিবেদন বলা হয়, একপর্যায়ে পুলিশ অতর্কিত হামলা করে এবং লাঠিপেটা করতে করতে কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে একাডেমিক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করতে থাকে। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক মিলনায়তনে ঢুকেও মারধর করতে থাকে। এতে শিক্ষক আবুল কালাম আজাদসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে আবুল কালামের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তিনটি জায়গা থেকে বিভিন্ন সময়ে অ্যাম্বুলেন্স আনার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স কলেজ ফটকে ঢুকতে না পেরে ফিরে যায়। পরে তাঁকে কলেজের পেছনের ফটক দিয়ে ধানখেত পার হয়ে রিকশাভ্যানে করে অনেক সময় পরে চুরখাইয়ের কমিউনিটিভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণার পর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে মরদেহ জানাজার জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের বাধায় সম্ভব হয়নি।
এই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এই প্রতিবেদন তাঁদের কাজে সহায়ক হবে।
এর আগে ঘটনার পরদিন ২৮ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক মো. আবদুল মোতালেব মাউশিতে পাঠানো প্রতিবেদনে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলমান থাকলেও স্থানীয় সাংসদসহ জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়নি।
গত ২৭ নভেম্বর কলেজকে জাতীয়করণের দাবিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় শিক্ষক আবুল কালাম আজাদসহ দুই ব্যক্তি নিহত হন।