পাহাড়ে দুটি হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার নেই
রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সাত খুনের ঘটনার পর পাহাড়ে সেনা, পুলিশ, বিজিবির সমন্বয়ে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। তবে এ হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পরও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। গতকাল রাতে পুলিশ বাদী হয়ে বাঘাইছড়ি থানায় মামলা করেছে। মামলায় ৪০–৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
গত সোমবার উপজেলা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে তিনটি কেন্দ্র থেকে ভোটের ফলাফল ও সরঞ্জাম নিয়ে বাঘাইছড়ি সদরে ফেরার পথে নয় মাইল নামক স্থানে চাঁদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এতে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, আনসারসহ সাতজন নিহত হন। এ ছাড়া প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পুলিশসহ আরও অন্তত ২০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১৭ জন ঢাকা ও চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁরা ক্রমেই সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শফিকুর রহমান।
বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, হামলার পর থেকে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। এখনো গ্রেপ্তার নেই। পর্যবেক্ষণ চলছে। তাঁর ধারণা, এ ঘটনার সঙ্গে নির্বাচনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
বাঘাইছড়িতে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। সাজেকে পর্যটক যাওয়া কার্যত বন্ধ রয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। ভয় ও আতঙ্কে গাড়িচালকেরা যেতে চাইছেন না। তবে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। গতকাল উপজেলা সদরে হাট বসলেও ক্রেতা ছিল কম।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে ধরার চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে গতকাল বিকেলে বাঘাইছড়ি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে মানববন্ধন হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনিক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সমিতির সভাপতি মিন্টু চাকমা, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান প্রমুখ। গত সোমবারের ঘটনায় দুই প্রাথমিক শিক্ষক নিহত ও অন্তত ১০ শিক্ষক আহত হন।
আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ
বাঘাইছড়িতে সাত খুন এবং বিলাইছড়িতে আওয়ামী লীগ নেতা হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রাঙামাটির জেলা প্রশাসন চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। সমাবেশ থেকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। নইলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। বক্তব্য দেন সাবেক নারী সাংসদ ফিরোজা বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নিখিল কুমার চাকমা, সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর, রাঙামাটির পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
গত মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি শহরে বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত মামলা হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি চলছে।
বিলাইছড়ি থানার ওসি পারভেজ আলী প্রথম আলোকে বলেন, সুরেশ কান্তির পরিবারের সদস্যরা তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে গ্রামের বাড়ি ফারুয়ার ওরাছড়িতে চলে গেছেন। এ কারণে মামলা হয়নি।
এদিকে বাঘাইছড়ি ও বিলাইছড়ির ঘটনায় জনসংহতি সমিতিকে (জেএসএস) দায়ী করছে বিভিন্ন পক্ষ। জেএসএস গতকাল এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘটনায় তারা সম্পৃক্ত নয় বলে দাবি করেছে। জেএসএসের তথ্য ও প্রচার বিভাগের সদস্য বিনয় কুমার ত্রিপুরার স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত জেএসএসকে দায়ী করে বক্তব্য দেওয়া কোনোভাবে যুক্তিসংগত নয়।