পাদুকার কারিগরেরা ব্যস্ত
ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাতে তৈরি পাদুকাশ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে চলছে। ক্রেতার পছন্দের জুতা তৈরি করে বাজারজাত করতে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। কারখানায় কাজ চলবে ২৭ রমজান পর্যন্ত।
চলতি বছরের শুরুতে সারা দেশে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোটের ডাকা হরতাল, অবরোধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাদুকা কারাখানার মালিকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। সে সময় পাদুকা ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তবে সে সময়ের তুলানায় ঈদ উপলক্ষে কেনাবেচা নিয়ে বর্তমানে মালিক ও শ্রমিকেরা সন্তুষ্ট। ভালো দাম পাচ্ছেন তাঁরা। পাশাপাশি বিক্রিও ভালো হচ্ছে তাঁদের।
জেলা পাদুকা মালিক সমিতির হিসাবমতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাটপাড়া, নাটাই উত্তর ও নাটাই দক্ষিণ, রাজঘর, অষ্টগ্রাম ও পৌর শহরের পীরবাড়ি এলাকায় জুতার কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় তিন শতাধিক জুতার কারখানা রয়েছে। পাইকারি বিক্রির দোকান আছে ৩০টি। ঈদ উপলক্ষে এসব কারখানায় প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। এসব কারখানায় প্রতি পাদুকার কারিগর দৈনিক এক ডজন জুতা তৈরি করতে পারে। ছোট কারখানাগুলোতে দিনে চার থেকে পাঁচ ডজন, মাঝারি কারখানায় ১০ থেকে ১২ ডজন আর বড় কারখানায় ২০ থেকে ৩০ ডজন পর্যন্ত জুতা তৈরি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে কারখানার মালিকেরা জুতা বিক্রি করেন ডজন হিসেবে। এক ডজন জুতা তৈরির কাজে শ্রমিকেরা পান গড়ে ১২০-২০০ টাকা। এক জোড়া জুতার পাইকারি দাম গড়ে ১৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা।
জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে ভারতের পাটনার মাহমুদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কুমারশীল মোড় এলাকায় ১০-১২ জন শ্রমিক নিয়ে প্রথম জুতার কারখানা দেন। তারপর থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আস্তে আস্তে হাতে তৈরির জুতার কারখানা বিস্তার লাভ করতে থাকে।
মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ মৌসুমকে ঘিরে প্রতিটি কারখানায় ব্যস্ততা বেড়েছে। ২৭ রমজান পর্যন্ত চলবে কারিগরদের কাজ। প্রতিদিন দুপুর ১২টা বা একটা থেকে ভোররাত পর্যন্ত অধিকাংশ কারখানায় কাজ চলে। সকালে ঘুমাতে যাওয়া শ্রমিকদের দিন শুরু হয় তাই দুপুরে।
ফাহাদ সুজ কারখানার মালিক মো. সেলিম, তারিন সুজের নূর ইসলাম ও গ্রিন সুজের মোবারক মিয়া ও স্মৃতি সুজের শাহ আলম মিয়া বলেন, হরতাল-অবরোধের মন্দার পর এবার ঈদে জুতার চাহিদা অন্যবারের তুলনায় মোটামুটি ভালো। তবে তাঁরা জানান, চীনা বা ভারতীয় জুতা বাংলাদেশের বাজারে না এলে হাতে তৈরি এসব জুতার চাহিদা আরও বেশি থাকত।
রায়হান সুজ কারখানার মালিক মো. জসিম বলেন, এ পর্যন্ত তিনি ২৫০ ডজন জুতা বিক্রি করতে পেরেছেন। তাঁর হাতে আরও ১০০ ডজন জুতা তৈরির অর্ডার (ক্রয় আদেশ) আছে। এ রকম অনেক কারখানায় জুতা সরবরাহের আরও
অনেক অর্ডার রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে জুতা সরবরাহ করতে তাই শেষ বেলায় ব্যস্ততায় মুখর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাতে তৈরি পাদুকা কারখানাগুলো।
মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কাথা বলে জানা গেছে, জুতা তৈরির প্রধান উপকরণ চামড়া, রেক্সিন, সোল, কভার, সুতা, রাবার, বোতাম, সুতা, সল্যুশন ব্যবহার করা হয়। এসব শহরের পীরবাড়ি বাজারেই পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুতার স্থানীয় বাজার ছাড়াও চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহীতেও সরবারহ করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাদুকা শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি সফি উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, অবরোধ-হরতালের পর ঈদ বাজার এতটা ভালো হবে মালিকেরা আশা করেননি। মালিক-কারিগরেরা হতাশ ছিলেন। কিন্তু ভালো বিক্রি হওয়ায় তাঁরা স্বস্তিতে আছেন।