পাটের স্যানিটারি প্যাড নিয়ে কাজ করে প্রথম হলেন বাংলাদেশি ফারহানা

ফারহানা সুলতানা
ছবি–সংগৃহীত

মাসিক ব্যবস্থাপনাকে নারী ও পরিবেশবান্ধব করার ক্ষেত্রে পাট দিয়ে স্যানিটারি প্যাড ও প্যাড তৈরির মেশিন নিয়ে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সহকারী বিজ্ঞানী ফারহানা সুলতানা। আর এর স্বীকৃতি হিসেবে এই বিজ্ঞানী বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার। পাটের সেলুলোজভিত্তিক স্যানিটারি প্যাড তৈরির যন্ত্র উদ্ভাবনের প্রস্তাবের জন্য চতুর্থ ইনোভেশন পিচ প্রতিযোগিতায় গ্র্যান্ড পুরস্কার জিতেছেন তিনি। আমেরিকান সোসাইটি ফর ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন (এএসটিএমএইচ) প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

আরও পড়ুন

ড. মোবারক আহমেদ খানের (বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা) সঙ্গে সমন্বয় করে ফারহানা সুলতানা ম্যানুয়াল পাটের সেলুলোজভিত্তিক ডিসপোজেবল প্যাড তৈরি করে এর পরীক্ষা চালিয়েছেন।

আজ বুধবার টেলিফোনে ফারহানা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, পাট দিয়ে স্যানিটারি প্যাড নারীরা ব্যবহার করে আরাম পাচ্ছেন কি না, স্বাস্থ্যসম্মত কি না, এ প্যাড ব্যবহারের পর মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে কি না—এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা চলছে। আর এ প্যাড এখনো হাতে তৈরি হচ্ছে। কিন্তু বাজারে ছাড়তে হলে তা মেশিনে বানাতে হবে। আমেরিকান সোসাইটি ফর ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনের এবারের প্রতিযোগিতার প্রতিপাদ্য ছিল—‘মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসম্মত বিশ্ব সম্প্রদায়’।

ফারহানা সুলতানা বলেন, ‘আমি পাট দিয়ে স্যানিটারি প্যাড তৈরির জন্য মেশিনের কথা জানিয়েছিলাম প্রতিযোগিতায়। এ নিয়ে ভিডিও উপস্থাপনা জমা দিয়েছিলাম। এতে বিভিন্ন দেশের বিচারকদের পাশাপাশি অডিয়েন্স পোলের মাধ্যমে ভোটের সুযোগ ছিল। সব বিবেচনায় আমি প্রথম হয়েছি।’

ফারহানা সুলতানা জানান, এ অ্যাওয়ার্ডের মূল্যমান পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার। আর আগামী বছর এ প্রতিযোগিতায় তিনি নিজে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পাবেন।

পাটের স্যানিটারি প্যাডের মেশিন উদ্ভাবনের প্রস্তাবে ইনোভেশন পিচ প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন ফারহানা সুলতানা। আমেরিকান সোসাইটি ফর ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন (এএসটিএমএইচ) প্রতিবছর এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

ফারহানা সুলতানা আরও বলেন, পাটের স্যানিটারি প্যাড নারীদের জন্য কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মতসহ গবেষণার অন্যান্য ফলাফল জানুয়ারি মাসে সবার সামনে উপস্থাপন করা হবে। এখন পর্যন্ত যে ফলাফল পাওয়া গেছে তা ইতিবাচক। তাই আশা করা যাচ্ছে, তখন দেশের বিভিন্ন কোম্পানিও এ ধরনের মেশিন তৈরিতে আগ্রহ দেখাবে।

এর আগেও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পাট দিয়ে প্যাড তৈরি প্রকল্পের জন্য ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে ১ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ৮৪ লাখ টাকা) মূল্যমানের পুরস্কার জিতেছিলেন ফারহানা সুলতানা। ২০১৯ সালে প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ফারহানা সুলতানা ভারতের একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেছিলেন, বাজারে বাণিজ্যিকভাবে যেসব স্যানিটারি প্যাড বিক্রি হয়, তাতে ৩ দশমিক ৪ গ্রাম প্লাস্টিক থাকে। জীবনব্যাপী একজন নারী প্যাড ব্যবহার করলে প্লাস্টিকের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৩ কিলোগ্রাম, যা মাটির সঙ্গে মিশে যেতে সময় লাগবে ৫০০ থেকে ৮০০ বছর।

মাসিকের কারণে বাংলাদেশের স্কুলছাত্রীদের ক্লাসে অনুপস্থিতির তথ্য নিয়ে ২০১৮ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে ‘মেন্সট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট অ্যামং বাংলাদেশি অ্যাডলোসেন্ট স্কুল গার্লস অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টরস এফেক্টিং স্কুল অ্যাবসেন্স: রেজাল্টস ফ্রম আ ক্রস-সেকশনাল সার্ভে’ শীর্ষক নিবন্ধে বলা হয়, মাসিকের কারণে দেশের ৪১ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী মাসে গড়ে প্রায় তিন দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। প্রায় ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থীই মাসিকের সময় স্কুলে অস্বস্তিতে ভোগে।

ফারহানা সুলতানা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও যথেষ্ট উন্নত নয়। এখন পর্যন্ত বাজারে যেসব প্যাড বিক্রি হচ্ছে, তার বেশির ভাগই পরিবেশবান্ধব নয়। ফলে, ব্যবহৃত প্যাড নিয়ে একধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাই তিনি পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি প্যাডের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন।