পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধুর বিচার বন্ধ ও মুক্তির দাবিতে আবেদন
>মুক্তিযুদ্ধের আনন্দ-বেদনাময় পথরেখার বহু চিহ্ন ধরা আছে রাশি রাশি নথিপত্রে। নির্বাচিত কিছু নথির মধ্য দিয়ে মহত্তম সেই সময়কে দেখা।
আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তান সরকারের বিবৃতি থেকে জানা যায়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা এবং অন্যান্য অপরাধে ১১ আগস্ট সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার শুরু হবে। এই অপরাধে বঙ্গবন্ধুর প্রাণদণ্ডও হতে পারে বলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদে ঘোষণা দেন।
ঘোষণাটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। ১০ আগস্ট বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তির জন্য সব রাষ্ট্রপ্রধান ও জাতিসংঘের মহাসচিবকে উদ্যোগ নেওয়ার আবেদন জানান।
১১ আগস্ট লন্ডনের হাইড পার্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে ১৫ হাজার জনতা উপস্থিত হয়। সভায় আবু সাঈদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে শান্তির দূত এবং নতুন জাতির নেতা রূপে অভিহিত করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষায় সেই শেষ মুহূর্তেও যুক্তরাজ্যকে সচেষ্ট হওয়ার অনুরোধ করেন।
১২ আগস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিচার বন্ধের জন্য আবেদন করেন। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে কিছু করা হলে সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দারুণ সংকট দেখা দেবে। সেদিন ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় সংসদের উভয় সভায় সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, শেখ মুজিবের প্রাণনাশের যে চক্রান্ত পাকিস্তান করছে, তা কার্যকর হলে ভারতেও নানা গুরুতর প্রতিক্রিয়া হবে।
১৩ আগস্ট কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ হাজার বুদ্ধিজীবী মার্কিন ও সোভিয়েত দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ জানিয়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে হস্তক্ষেপ করতে বলেন।
এর আগে ৯ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরণ সিং এ বিচারের প্রতিবাদ করে লোকসভায় ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের কোর্ট মার্শাল হলে পাকিস্তানি জঙ্গিশাহিকে তার সমুচিত ফল ভোগ করতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষার্থে ইয়াহিয়াকে প্রভাবিত করার জন্য ১০ আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ২৪ জন রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে আবেদন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ১১ জন সিনেটরও এদিন বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষার জন্য তাঁদের সরকারের কাছে আবেদন জানান।
যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মানবিক কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে।