পাঁচ দশক পূর্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রাধান্য থাকবে: পররাষ্ট্রসচিব

১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে আগামী ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বৈঠক হবে। ওই বৈঠকের ১৫ দিন আগে আগামীকাল রোববার ঢাকায় অষ্টম অংশীদারত্ব সংলাপে বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, সম্পর্কের পাঁচ দশক পূর্তিকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও নিবিড় করা এবং উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময়ের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে এই সংলাপে।

আজ শনিবার দুপুরে অংশীদারত্ব সংলাপ বিষয়ে দুই দেশের অগ্রাধিকার নিয়ে নিজ দপ্তরে প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রসচিব।

দুই বছর বিরতির পর অনুষ্ঠেয় এই আলোচনার তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল মাসুদ বিন মোমেনের কাছে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে করোনা মহামারির কারণে দুই দেশের মধ্যে নানা পর্যায়ের অনেক বৈঠক হতে পারেনি। সেই দিক থেকে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির আগের এই বৈঠকের বিশেষ তাৎপর্য হচ্ছে এটি দুই দেশকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার সুযোগ করে দেবে। এই আলোচনার পর ওয়াশিংটনে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হবে। এরপর নিরাপত্তা সংলাপ, অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব বৈঠক এবং প্রতিরক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিলে এই বৈঠকের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।’

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন
ছবি: সংগৃহীত

অংশীদারত্ব সংলাপে অংশ নিতে রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড তিন দিনের সফরে আজ শনিবার বিকেলে ঢাকায় আসছেন।

দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক পর্যায়ের সফর বিনিময়ের বিষয়টি রোববারের আলোচনায় আসবে কি না, তা মাসুদ বিন মোমেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর খুব বেশি হয়নি। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফরের পর দুই পক্ষের মধ্যে যেন উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময় হয় সে বিষয়টিতে আমরা জোর দেব। অংশীদারত্ব সংলাপে সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি সম্পর্ক এগিয়ে নিতে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতায় গুরুত্ব দেওয়া হবে।’

ডিসেম্বরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের সম্পর্কে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে। এ নিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নতুন। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করছি। ফলে আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটি অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে উত্থাপন করা হবে।’

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সামগ্রিকভাবে মানবাধিকারের সুরক্ষার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং যে বিষয়গুলোতে কাজ হচ্ছে সেগুলো তুলে ধরা হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানতে চাইলে সরকারের ভাবনা তাদের জানানো হবে। শ্রম অধিকারের বিষয়ে তাদের উদ্বেগ দূর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে কাজ করছে। কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়নের পাশাপাশি শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।

ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলে (আইপিএস) যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। অংশীদারত্ব সংলাপে ওয়াশিংটন বিষয়টিকে কীভাবে তুলে ধরতে পারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আইপিএসের বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে তারা তুলবে। গত দুই–আড়াই বছরে তারা তো অনেক দূর এগিয়েছে। তারা তাদের অবস্থান জানাবে। সুতরাং আমরা কীভাবে দেখি সেটা তাদের জানাব। আইপিএসে অর্থনীতির প্রেক্ষাপটটা অনুপস্থিত এটা তাদের জোর দিয়ে বলব। এর পাশাপাশি আঞ্চলিক সংযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগ কীভাবে আইপিএসের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনা কী, সেটা তাদের কাছে জানতে চাইব।’

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে উন্নত সমরাস্ত্র কেনার অংশ হিসেবে জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অফ মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) ও আকসা (অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসেস অ্যাগ্রিমেন্ট) সই নিয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তবে এবারের বৈঠকে এ নিয়ে কিছু হবে, এটা বলার সুযোগ নেই। নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংলাপে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। সন্ত্রাস ও উগ্র জঙ্গিবাদ দমনসহ নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা, কৌশলগত সহযোগিতা, আঞ্চলিক বিষয়ও আলোচনায় আসবে। রোহিঙ্গা সমস্যার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মানবিক সহায়তার পাশাপাশি এ সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ দেওয়া এবং ভাসানচরে তহবিলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইবে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখ করার মতো এবং এই বিনিয়োগ মূলত জ্বালানি খাতে। আমরা মার্কিন বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতে চাই। তাই তাদের আমরা তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তি, কৃষিজাত পণ্য বিপণন ও সংরক্ষণ এবং হালকা শিল্পের মতো নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগে অনুরোধ জানাচ্ছি।’